২২ বছর আগে সংসদে হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে বুধবারের ঘটনা। এর আগে ২০০১ সালে এই ১৩ ডিসেম্বরেই সংসদে জঙ্গি হামলা হয়েছিল।আজ লোকসভার গ্যালারি থেকে চেম্বারের ভিতর ঝাঁপিয়ে পড়লেন দুই যুবক। এই ঘটনায় সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ওই দুই যুবক লোকসভায় ঢুকে ‘রং বোমা’ ছোড়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের আটক করা হয়েছে।
বুধবার লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছিল। সভায় ওই সময়ে মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বক্তৃতা করছিলেন। আচমকা দেখা যায়, দুই যুবক সভার মাঝে লাফিয়ে পড়েন। বেঞ্চের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সাংসদেরাও আসন ছেড়ে উঠে পড়েন। নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান , হামলাকারীরা হলুদ রঙের গ্যাস জাতীয় পদার্থ সভায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে লাফিয়ে লাফিয়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছিলেন তাঁরা। সেগুলিকে ‘রং বোমা’ বলে দাবি করা হচ্ছে। গ্যাস দেখে সভায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ধোঁয়া বিষাক্ত হতে পারে, সেই আতঙ্কে ত্রস্ত হয়ে পড়েন সাংসদেরা। হামলাকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। দুই সাংসদ দ্রুত তাঁদের ধরে ফেলেন এবং নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেন। ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও হামলাকারীদের স্লোগান দিতে দিতে সভা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
কি স্লোগান দিচ্ছিলো এই সন্ত্রাসবাদীরা ?‘তানাশাহি নেহি চলেগা’— এই স্লোগান দিতে লোকসভার গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়েছিল দু’জন। জানা গেল দু’জনের নামও। এক জন অমল শিন্ডে। তাঁর বাড়ি মহারাষ্ট্রে। অন্য জনের নাম নীলম সিংহ। তিনি হরিয়ানার বাসিন্দা বলে খবর। দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সাগর শর্মা নামে এক জন। তিনিই পুরো ঘটনায় ‘নেতৃত্ব’ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সাগর একটি ভিজিটর পাস জোগাড় করেন বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার অতিথি বলে। তাঁরই সঙ্গে আরও এক জন সংসদে ঢোকার চেষ্টা করেন।
এই ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরম জানান, তিনি প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন দর্শক গ্যালারি থেকে কেউ পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি লাফ দেওয়ার পরে তিনি বুঝতে পারেন নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে কেউ ঢুকে পড়েছে। তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “দুই যুবক গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাঁরা এমন কিছু একটা ছুড়েছিলেন যা থেকে গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। আমাদের দুই সাংসদের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের বার করে নিয়ে যান।’’
অন্য দিকে, পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে হলুদ ধোঁয়া নির্গত ‘ক্যান’ নিয়ে প্রতিবাদ করার সময় এক যুবক এবং এক মহিলাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের দু’জনকে পরিবহণ ভবনের সামনে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলছে, তাতে জানা যাচ্ছে, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে ছিল ‘স্মোক গ্রেনেড’। বস্তুত, বুধবারই সংসদে হামলার ২২ বছর পূর্তি। ওই দিনই এই হামলার ফলে দুইয়ের মধ্যে কোনও যোগ আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।