TMC র ভেতরে নবীন প্রবীনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে !সুব্রত বক্সীর মন্তব্যে তীব্র আপত্তি, কুণাল ঘোষের!
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসেই নতুন বিতর্ক তৈরি হল তৃণমূলের অভ্যন্তরে । তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী যে মন্তব্য করেছেন ,এ নিয়ে নিয়ে তীব্র আপত্তি জানালেন তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল জানিয়েছেন, সুব্রত বক্সীর বাক্যগঠন নিয়ে তাঁর ‘আপত্তি’ রয়েছে।
উলেখ্য , তৃণমূলের অন্দরে সুব্রত বক্সী তথা সিনিয়র গ্রুপ নিয়ে অভিষেক শিবিরের বরাবরই কিছু না কিছু বক্তব্য থাকে। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের বিতণ্ডায় হস্তক্ষেপ করতে সুব্রত বক্সী নিজেই গিয়ে হাজির হন নৈহাটিতে। সেখানে অনুপস্থিত ছিলো সোমনাথ শ্যাম। উল্টে সোমনাথ বলেন, এমন কোনও বৈঠক হচ্ছে বলে তিনি জানতেনই না! ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে সুব্রত বক্সী এবং অর্জুন সিং ফিরে আসেন। এই ব্যর্থ প্রয়াস নিয়ে অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছেন।
১ জানুয়ারি ,সোমবার, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে সুব্রত বক্সী বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, আমি মনেকরি , উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না।আর যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন অভিষেক ।’’
সুব্রত বক্সীর কথায় তৃণমূলের একাংশ যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে, তা হলো যে, অভিষেক লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যেতে চাইছেন। বস্তুত, সুব্রত বক্সীর বক্তব্যে ‘যদি লড়াই করেন’, ‘পিছিয়ে যাবেননা ’ এসব শব্দবন্ধে অভিষেকের পলায়নী মনোবৃত্তির দিকে আঙুল তোলা হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
সুব্রত বক্সীর বক্তব্য সম্পর্কে কুণাল ঘোষ বলেন, রাজ্য সভাপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বাক্যগঠন নিয়ে আমার আপত্তি রয়েছে। এটা কখনওই কাঙক্ষিত নয়।অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছেন। আর তিনি যা বলতে চান, তা শুনলে দলেরই মঙ্গল। সুব্রত বক্সীর কথা শুনলে মনে হচ্ছে অভিষেক ব্যানার্জী লড়াইয়ের ময়দানে নেই। যেন তিনি পালিয়ে যেতে চাইছেন! অভিষেক-ঘনিষ্ঠ কুনাল ঘোষের কথায়, এই ধরনের আলটপকা কথা বলে আসলে অভিষেকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হয়েছে কিছু সিনিয়র নেতা । যা দলের জন্য মোটেই ভাল সঙ্কেত নয়।’’
প্রসঙ্গত, পুজোর পর থেকেই অভিষেক ব্যানার্জীকে সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে চোরাস্রোত বইছিলো । এর মধ্যেই গত শনিবার অভিষেককে বোঝাতে তাঁর কালীঘাটের অফিসে বৈঠকে বসেছিলেন ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ কুণাল ঘোষ , ব্রাত্য বসু, পার্থ ভৌমিক, তাপস রায়দের মতো নেতারা। তাঁরা আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেককে ‘সক্রিয়’ হওয়ার জন্য। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের আর্জি ফিরিয়ে অভিষেক জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে তিনি কেবল ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠদের সামনে তাঁর অপারগতার যে নেপথ্যে দু’টি কারণের কথা উল্লেখ করেছিলেন তা হলো এক, তিনি যে আগ্রাসী আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন, তা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই, রাজ্য সরকারের আমলাদের একাংশের ভূমিকায় তিনি ক্ষুব্ধ। এরা সময়ের কাজ সময়ে করছেন না। যে কারণে সাধারণ মানুষের সামনে দল তথা মমতার ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
গত দু’মাস ধরে তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ, বয়সবিধি নিয়ে প্রবল ‘দ্বন্দ্ব’ চলছে। এই নিয়ে শাসকদলের সর্বোচ্চ স্তরের মতের বৈপরীত্য বার বার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সেই আবহে সোমবার সুব্রত বক্সীর মন্তব্য নতুন করে তৃণমূলের ভেতরে বিতর্ক তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যার সঙ্কেত মিলেছে কুণালের বক্তব্যেও।
এ ছাড়া, অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের আরও বক্তব্য, তাঁদের ‘সেনাপতি’ তো কখনও বলেননি যে মমতাকে সামনে রেখে তিনি লড়বেন না! বরং প্রতিটি সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘মমতাই নেত্রী।’’ তা হলে সুব্রত বক্সীর এই ধরনের বক্তব্যের অর্থ কী? সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।মূলত দলের মধ্যে প্রবীণদের একটি অংশ ‘নিরাপত্তাহীনতা’য় ভুগছেন।এর ফলে তাঁরা বিভিন্ন মন্তব্য করে দলকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।