নিয়মিত সঙ্গম করলে স্বাস্থ্যের কী উন্নতি হয়? কী জানাল গবেষণা?
যৌন সঙ্গম কারও কাছে ভালবাসার প্রকাশ, কারও কাছে শারীরিক পরিতৃপ্তি। কিন্তু আপনি জানেন কি,এই যৌন মিলনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে । অন্তত এমনটাই মত গবেষকদের।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে করা একটি সমীক্ষায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে, সপ্তাহে একাধিক বার মিলন করে যে পড়ুয়ারা, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি।
ক্যালিফোর্নিয়া-সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাও একই দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। গবেষকদের মতে, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত দু’ থেকে তিন বার যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সুস্থ রয়েছেন । গবেষণা বলছে, নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের মধ্যে থাকলে শরীরে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় আইজিএ (IAG) নামক অ্যান্টিবডি। ফলে সর্দি-কাশির সমস্যা কমে অনেকটাই।
ভাল রাখতে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত শরীরচর্চার সময় না পেলে যৌনতাই হয়ে উঠতে পারে শরীরচর্চার বিকল্প, মত বিশেষজ্ঞদের। নিয়মিত সঙ্গম, অর্থাৎ নিয়মিত যৌনমিলন, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিভিন্ন ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি কেবল সম্পর্কের মধ্যে যৌন সন্তুষ্টি নয়, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিয়মিত সঙ্গমের কিছু প্রধান সুবিধা উল্লেখ করা হলো:
শারীরিক সুবিধা:
১. হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নতি:
নিয়মিত সঙ্গম হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো। এটি হৃদস্পন্দন বাড়ায়, যা রক্তপ্রবাহ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
২. ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি:
নিয়মিত যৌনমিলনের ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। নিয়মিত সঙ্গমে শরীরে ইমিউনোগ্লোবুলিন A (IgA) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. ক্যালোরি বার্ন এবং ফিটনেস:
যৌনমিলন একটি ভালো ব্যায়ামের রূপ। এটি শরীরে ক্যালোরি বার্ন করে, পেশী শক্তিশালী করে এবং স্থূলতা কমায়। এটি নিয়মিত ব্যায়ামের মতোই কার্যকর।
৪. ব্যথা উপশম:
নিয়মিত সঙ্গম প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। যৌনমিলনের সময় শরীর থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা ব্যথা উপশমে সহায়ক।
মানসিক সুবিধা:
১. স্ট্রেস মুক্তি:
যৌনমিলন স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। এটি মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন নিঃসরণের ফলে মানুষ আরাম ও সুখ অনুভব করে।
২. সম্পর্কের উন্নতি:
নিয়মিত যৌনমিলন দম্পতির মধ্যে সম্পর্ককে মজবুত করে। এটি সম্পর্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও বিশ্বাস বাড়ায়। যৌনমিলন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, যা সম্পর্কের মানসিক সংযোগকে গভীর করে।
৩. ভালো ঘুম:
যৌনমিলনের পর শরীর থেকে প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ভালো ঘুমে সহায়ক। ভালো ঘুম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য সুবিধা:
১. জীবন সন্তুষ্টি:
নিয়মিত সঙ্গম ব্যক্তির জীবনের সন্তুষ্টি ও সুখের অনুভূতি বাড়ায়। এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়ক।
২. হরমোন ব্যালেন্স:
যৌনমিলনের সময় শরীর থেকে বিভিন্ন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হরমোন ব্যালেন্স রাখতে সহায়ক। এটি মেনোপজ বা মেনস্ট্রুয়াল সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. দীর্ঘায়ু:
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যৌনমিলনের ফলে ব্যক্তির জীবনের আয়ু বাড়ে। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে, যা দীর্ঘায়ুর জন্য সহায়ক।
নিয়মিত সঙ্গমের উপকারিতা এতই বেশি যে, এটি কেবলমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটি অবশ্যই পারস্পরিক সম্মতি এবং নিরাপত্তার সাথে হওয়া উচিত, যাতে উভয়পক্ষের জন্য এটি স্বাস্থ্যকর ও আনন্দদায়ক হয়।