ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে যখন মূত্রনালির নিম্নাংশ আক্রান্ত হয়, তখন চিকিৎসাশাস্ত্রে এই পরিস্থিতিকে মূত্রথলির সংক্রমণ বা সিস্টাইটিস বলা হয়। আর মূত্রনালির ঊর্ধ্বাংশ আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞরা তাকে কিডনির সংক্রমণ বা পায়েলোনেফ্রাইটিস বলে ধরে নেন। নারী এবং পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
আমেরিকান হেলথ লাইনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীরা প্রস্রাবের সংক্রমণে বেশি ভোগেন। কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের মূত্রনালীর যে টিউব মূত্রাশয় থেকে প্রস্রাব বহন করে তা পুরুষের মূত্রনালী থেকে ছোট। তাই মূত্রনালী এবং মূত্রাশয়ের দূরত্ব নারীদের কম হওয়ায় সহজে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এজন্য প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে।
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি (Dysuria) সাধারণত ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), ডিহাইড্রেশন, কিডনির পাথর, বা প্রস্রাবের নালীর জ্বালাপোড়ার কারণে হতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হলো:
১. পর্যাপ্ত জল পান করুন:
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি প্রস্রাবকে লালচে হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। জল শরীরের টক্সিন ফ্লাশ আউট করতে সাহায্য করে।
২. ক্র্যানবেরি জুস:
চিনি ছাড়া ক্র্যানবেরি জুস দিনে ১-২ গ্লাস পান করুন (ডায়াবেটিস রোগীরা সতর্ক থাকুন)।
৩. বেকিং সোডা ( খাবার সোডা ) ও জল :
১ গ্লাস কুসুম গরম জলে ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে দিনে ১ বার পান করুন ৫-৭ দিন। এটি প্রস্রাবের অম্লতা কমিয়ে জ্বালাপোড়া দূর করে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করবেন না (সোডিয়ামের মাত্রা বাড়তে পারে)।
- আরও পড়ুন– বঙ্গে ‘২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে বিরাট ‘মাস্টারপ্ল্যান’ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) – এর !
৪. দই বা প্রোবায়োটিক:
দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া (ল্যাক্টোব্যাসিলাস) ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। প্রতিদিন ১ কাপ টক দই খান।
৫. আদা-লেবুর চা:
১ কাপ কুসুম গরম জলে দু ইঞি আদা কুচি ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। আদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ এবং লেবুর ভিটামিন-সি ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
৬. ডাবের জল :
ডাবের পানি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ, যা শরীর হাইড্রেট রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়। দিনে ১-২ গ্লাস পান করুন।
৭. লবঙ্গ জল :
৪-৫ টি লবঙ্গ হাফ গ্লাস জলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে পান করুন। লবঙ্গে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা প্রস্রাবের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৮. মুলার রস:
সাদা মুলা ব্লেন্ড করে রস বের করে ১ চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার পান করুন। মুলার ডিটক্সিফাইং গুণ প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করে।
৯. গরম সেঁক:
তলপেটে গরম ( সহ্য করার মত গরম ) জলের বোতল বা হিটিং প্যাড রাখুন দিনে কয়েকবার। এটি মুত্রথলির চাপ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
১০. এড়িয়ে চলুন:
– ক্যাফেইন (চা, কফি), অ্যালকোহল, মশলাদার খাবার।
– প্রস্রাব আটকে রাখা।
– সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি প্যাড বা সাবান।
– প্রস্রাবের সমস্যা যতদিন দূর হয় নি ততদিন সহবাস করবেন না|
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
– প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে।
– জ্বর, পিঠে ব্যথা বা বমি হলে।
– ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি না হলে।
সতর্কতা:
গর্ভবতী মহিলা, ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগীরা যেকোনো ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রস্রাবের সমস্যা বারবার হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে যা চিকিৎসক দিতে পারেন।