গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএস (GBS) হল স্নায়ুর একটি বিরল রোগ। এই স্নায়বিক রোগটি ধীরে ধীরে ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে এবং মহারাষ্ট্রের পুনেতে এর প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক। আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছে এবং ইতিমধ্যে এক রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র পুনে নয়, মহারাষ্ট্রের অন্যান্য জেলাতেও এই বিরল স্নায়বিক রোগে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আগেই অনুমান করেছেন যে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএস-এর ক্ষেত্রে প্রধানত ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ ঘটে যা মারাত্মকভাবে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। যারা জিবিএস-এ আক্রান্ত হন, তাদের ক্ষেত্রে ভুলবশত ইমিউন সিস্টেম স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। মস্তিষ্ক এবং শিরদাঁড়ার বাইরে থাকা সুস্থ স্নায়ুগুলিকে আক্রমণ করে ইমিউন সিস্টেম। প্রথমে আক্রান্তের শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে পক্ষাঘাত এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএস (GBS) আসলে কী?

ফরাসি চিকিৎসক জা্টিস্ট অক্টাভ ১৮৫৯ সালে এইটি প্রথম বর্ণনা করেন। ১৯১৬ সালে জর্জ গুলেন, জিন আলেকজান্ড বারি এবং আন্দ্রে স্ট্রোল দুজন সৈনিকের মধ্যে এই রোগটি পর্যবেক্ষণ করেন এবং রোগের প্রধান শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেন।
গুলেন বারি সিনড্রোম একটি জটিল রোগ এবং আচমকাই হানা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিরা কয়েক সপ্তাহ ধরে ছোটখাটো সংক্রমণে ভুগতে পারেন। সাধারণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনেকশন দেখা দেয় আক্রান্ত রোগীর শরীরে। কম্পাইলোব্যাক্টরের হয় এই সমস্ত সংক্রমণ, যার কারণে হতে পারে ডায়েরিয়া। ডক্টর ত্রিপাঠীর কথায়, যেকোনও সাধারণ, ছোট সংক্রমণও এই রোগে পরিণত হতে পারে। শুরুটা হয় ডায়েরিয়া দিয়েই। জিবিএস বা গুলেন বারি সিনড্রোমের ক্ষেত্রে প্যারালিসিস বা পক্ষাঘাত হতে পারে আক্রান্তের। প্রথমে পায়েই হবে প্যারালিসিস। তারপর দেখা দেবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। রোগীকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টেও রাখতে হয়।
- আরও পড়ুন– পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করলো ট্রাম্প !গরীব থেকে অতি গরীব রাষ্ট্রে পরিণত হলো পাকিস্তান !
অন্যদিকে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি) এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২১টি জিবিএস নমুনায় তারা নরোভাইরাস (norovirus) এবং ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি (Campylobacter jejuni) ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছে। ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর জেজুনি (Campylobacter jejuni) এবং নরোভাইরাস (norovirus) উভয়ের কারণেই গা-গোলানো, বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মহারাষ্ট্রের পুণের অনেক রোগীর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে জিবিএস দেখা দেওয়ার আগে, উল্লিখিত লক্ষণগুলি দেখা গিয়েছিল।
জিবিএস প্রাণনাশের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে সমস্ত বয়সীদের ক্ষেত্রেই। পাশ্চাত্যে এই রোগের ঘটনা প্রতি ১,০০,০০০ জনে ০.৮৯ থেকে ১.৮৯। শিশু ও কিশোরদের তুলনায় বড়দের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রতি দশ বছরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২০% বেড়ে যায়। নারীদের তুলনায় পুরুষদের গুলেন বারি সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা ১.৭৮ গুণ বেশি।গুলেন বারি সিনড্রোমের প্রথম দিকে অসাড়তা এবং ব্যথা থাকতে পারে। এর পরবর্তীকালে দেহের উভয়ের হাত-পা সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে যায়। এই দুর্বলতা একদিন থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। পাঁচ জনের মধ্যে একজনের দুর্বলতা ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। ঘাড়ের পেশীও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অনেকেরই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অসাড় হয়োর কারণে মুখের পী দুর্বল, খাবার গিলতে অসুবা, চোখের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে দুর্বলতা শুধু পায়েই সীমাবদ্ধ থাকে। সব মিলিয়ে, গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংশ হাঁটতে পারে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গা যেমন ঘাড়, পিঠ, কোমর ইত্যাদি জায়গায় ব্যথা থাকতে পারে।
প্রতিরোধের উপায় কি?
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, এই রোগের কোনও প্রতিকার নেই। লক্ষণগুলি যেমন- দুর্বলতা, অসাড়তা, বা হঠাৎ করেই মনে হওয়া যেন পিন ফুটছে, জ্বালা করছে, ঝনঝন করছে – উপসর্গগুলি প্রথমে পায়ে দেখা যায়। তারপর তা ক্রমশীরের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এইসব লক্ষণ দুই পা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে দুই হাতেও। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জিবিএস-এর উপসগুলি কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ আক্রান্তই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যান, তবে কিছু রোগীর মধ্যে রোগের প্রভাব থেকে যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগ প্রতিরোধে কিছু খাবার বর্তমানে খাদ্যতাল থেকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়।
এই সময় একেবারেই বাইরের খাবার খাবেন না। বিশেষত রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া কাটা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
এই সময় পনীর, চিজ জাতীয় দুধজাত খাবার না খাওয়াই ভালো। ভাতও বেশি না খাওয়ার পরর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া প্যাকেটজাত মাছ ও মাংস জাতীয় খাবারদাবারও এই সময় কম খেতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, খাওয়ার আগে হাত ধোওয়া উচিত। শুধু তাই নয়, জনবহুল এলাকায় যাতায়াতের সময় মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। যদিও গুলেন বারি সিনড্রোম ছোঁয়াচে রোগ নয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ থেকে এই রোগ অন্যের শরীরে সংক্রমিত হয় না, তবে সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নইলে এই বিরল স্নায়ুর রোগ প্রাণঘাতী হতে পারে।
2 Comments
Pingback: একের পর এক উপদেষ্টার পদত্যাগ! ইউনূসের দিন কি শেষ বাংলাদেশে ? - প্রথম খবর
Pingback: “যমুনার জল তো আমিও খাই”! যমুনার জলে বিষ মেশানো প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালার বক্তব্য নিয়ে তীব্র আক্রমণ