বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে এবিটি সম্পর্কে গোয়েন্দাদের কাছে উঠে আসছে একের পর এক ভয়ঙ্কর তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বাংলায় গ্রেনেড হামলা সহ বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনা ছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-এর। এসটিএফ (স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স) সূত্রে জানা গেছে, তাদের জেরার মুখে এই দাবি করেছেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জেএমবি (জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র সদস্য তারিকুল ইসলাম।
এর আগে অভিযুক্ত জেএমবি (জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র সদস্যকে দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এসটিএফ। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে বহরমপুর আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন মেনে তারিকুলকে তিন দিনের জন্য এসটিএফ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। সূত্রের খবর, তার পরেই তারিকুলকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে এই মামলায় বাকি ধৃতদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
- আরও পড়ুন —মমতার সাথে জেহাদী মুসলিম যোগ ! শুভেন্দুর বিস্ফোরক দাবীতে কি ফেঁসে গেলেন মমতা ব্যানার্জী !
এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর তারিকুল অসম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্যে আত্মগোপন করেছিলেন। তখন তারিকুলকে আশ্রয় দিয়েছিলেন অসমের বাসিন্দা এবং আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য নুর ইসলাম। ২০১৫ সালে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) তারিকুলকে গ্রেফতার করে। বিচার শেষে তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন,আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-র শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে জেলের ভিতরেই তারিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন নুর।
প্রাথমিকভাবে তারিকুলের পরিবারের কাছে তিন লক্ষ টাকা নগদ পৌঁছে দিয়েছিল নুর। অভিযোগ করা হয়েছে যে, জেলে বসে সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছিলেন তারিকুল। ফেরার অনুচরদের ‘আশ্রয়’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এবিটি-র সঙ্গে যুক্ত করেন। গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছেন, এবিটি-র বাংলাদেশি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কলে ‘মাকসাদ-এ-জিহাদ’ নামে একটি আলোচনাচক্রে অংশ নিয়েছিলেন তারিকুল। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরি করা হবে। প্রাথমিকভাবে মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং দুই দিনাজপুরে সংগঠন বিস্তারের কাজ শুরু করে এবিটি।
অসম থেকে ধৃত নূর মোহাম্মদ ও শাহিনুর ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ জানতে পারে, পাকিস্তানি গুচর সংস্থা (ISI) সরাসরি আর্থিক মদত দিয়েছিল জেএমবি জঙ্গি সংগঠনকে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের পর জেএমবি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সংগঠন ঝিমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে, বৃহত্তর বাংলাদেশ না কি ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে নাশকতা— কোন লক্ষ্যে এগোবে জঙ্গি সংগঠন সেই নিয়ে জেএমবির পাকিস্তানি ও বাংলাদেশ নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে জন্মেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। আত্মঘাতী জঙ্গি তৈরি করে বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ওই জঙ্গি সংগঠনের বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। ধৃত তারিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই সংগঠন সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী দল। ধৃতকে আবার হেফাজতে নিয়ে এ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ‘লিঙ্কম্যান’দের গ্রেফতার করতে চাইছে এসটিএফ।