দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েনের খবর ক্রমাগত আসছে। বিশেষ করে পহেলগাঁও হামলার পর থেকে তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য কংগ্রেসের অন্দরে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দলের চেয়ে তাঁর কাছে দেশই গুরুত্বপূর্ণ।
কোচিতে আয়োজিত একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন শশী তারুর। সেখানে তাঁকে তার আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সম্প্রতি দলের অন্দরে তাঁকে নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তার প্রেক্ষিতেই প্রশ্নটি ওঠে। কোনও দ্বিধা ছাড়াই সোজাসাপটা উত্তর দেন শশী তারুর।
তারুরের বলতে শোনা যায়, “কার প্রতি অনুগত? আমার মনে হয়, দেশই সবার আগে। দেশকে উন্নত করার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব। তাই, যে দলের সদস্যই হন না কেন, ভারতকে উন্নত করা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এই বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারও সকল রাজনৈতিক দলের রয়েছে।”
পহেলাগঁও হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির সমর্থনে সরব হন তারুর। Operation Sindoor নিয়ে বিদেশে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি, তাঁকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায়। এই কারণে কংগ্রেসের অন্দরমহলে তারুরকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়। এ প্রসঙ্গে তারুর বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ এবং সীমান্তবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে আমি সেনাবাহিনী ও সরকারকে সমর্থন জানিয়েছি, যা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তবে আমি আমার অবস্থানে অটল ছিলাম, কারণ আমার বিশ্বাস, দেশের স্বার্থে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর বর্তমান সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন করলে এক পড়ুয়াকে তারুর বলেন, “দলকে সম্মান করার অর্থ হলো কিছু মূল্যবোধ এবং আস্থা, যা আমাদের দলটির সঙ্গে যুক্ত রাখে। তবে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্য দলের সঙ্গে সহযোগিতা করাও জরুরি। কখনও কখনও দলের মনে হতে পারে যে এটি বিশ্বাসঘাতকতা। এটি একটি বড় সমস্যা। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এটি বাধা হওয়া উচিত নয়। আমার ১৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনের মূলমন্ত্র হলো সার্বিক উন্নয়ন। আমি সর্বজনীন অন্তর্ভুক্তি এবং সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী। একই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতিও অটুট বিশ্বাস রাখি।”
সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে একই কথা বললেন তারুর। জানালেন, তাঁর কাছে দেশ সবসময় প্রথম। তিনি বলেন, “দেশের সেবা করতেই ভারতে ফিরে এসেছিলাম। আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি।” এ প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরুর উক্তি তুলে ধরেন তারুর। তাঁর কথায়, “ভারতের মৃত্যু হলে কে বাঁচবে?” কঠিন সময়ে বিভেদ ভুলে একত্রিত হওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।