পেহেলগাঁও হামলার দেড় মাস পর কাশ্মীরের উন্নয়নে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্বের উচ্চতম রেলব্রিজ চেনাব সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) । পাশাপাশি শ্রীনগর-কাটরা রেলপথও চালু হলো। ওই লাইনে যাত্রা শুরু করল ‘ভারতীয় প্রগতিরীক’ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে চেনাব সেতুর তুলনা করেছেন মোদী। তিনি উল্লেখ করেন, প্যারিসে আইফেল টাওয়ার দেখতে মানুষ যায়। আর এই সেতু আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু। এবার মানুষ চেনাব সেতু দেখার জন্য কাশ্মীর আসবে। তিনি আরও বলেন, পর্যটন বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রও উপকৃত হবে। এই রেলপ্রকল্প ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুযোগ হিসেবে দেখেন মোদী। তাঁর মতে, কাশ্মীরি পণ্য এখন আরও কম সময়ে এবং সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে।
- আরও পড়ুন — TMC বিধায়কের ঘনিষ্ঠ অস্ত্র ব্যবসায়ী পলাতক! ছবি শেয়ার করে ডিজি রাজীব কুমারকে কি বড় ‘পরামর্শ’ শুভেন্দুর!
কাশ্মীর থেকে আবার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটন মানুষের জীবিকা বাড়ায় এবং মানুষকে একত্রিত করে। কিন্তু আমাদের পড়শি দেশ মানবতাবিরোধী এবং পর্যটনবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ঘটনা তার একটি উদাহরণ। পাকিস্তান পহেলগাঁওয়ে মানবতার উপর আঘাত হেনেছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, ভারতে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। মোদী আরও বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরের পর্যটনের উপর হামলা চালিয়েছে। এই পর্যটন জম্মু-কাশ্মীরের দরিদ্র জনগণের জীবিকা নির্ভরশীল, আর সেই পর্যটনকেই নিশানা করেছে পাকিস্তান।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান স্থানীয় সহিস আদিল হুসেন। কাশ্মীরের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই আদিলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, কেউ ঘোড়া চালান, কেউ গাইড হিসেবে কাজ করেন— পাকিস্তান সকলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। সন্ত্রাসবাদীদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ানো আদিলও সেখানে রোজগারের আশায় গিয়েছিলেন। পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করতেন। আদিলকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
মোদী বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের যুবসমাজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের ফলে জম্মু-কাশ্মীর অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ সন্ত্রাসবাদের কারণে এখানকার মানুষ তাদের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সন্ত্রাসবাদকে তাদের অনিবার্য ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিতে শুরু করেছিল। তবে আমরা সেই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের যুবসমাজ নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এবং তা বাস্তবায়নেও সফল হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন কোনওভাবেই থমকে থাকবে না, এমন আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি উল্লেখ করেন যে এখানকার যুবসমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যদি কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তবে সেই প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করবেন তিনি।
এক মাস আগে, ৬ মে রাতে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে ভারতীয় সেনা হামলা চালায় , যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। শুক্রবার কাশ্মীর থেকেই সেই অভিযানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, ৬ মে রাতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের উপর সফল হামলা করা হয়। এখন থেকে পাকিস্তান যখনই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা শুনবে, তাদের সর্বনাশের স্মৃতি মনে পড়বে। পাকিস্তানের সেনা ও সন্ত্রাসবাদীরা ভাবতেও পারেনি ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এমনভাবে আঘাত হানবে। তারা যে সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি গড়ে তুলেছিল, তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে, পাকিস্তান কীভাবে জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালিয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের হামলায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন মোী। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাঁদের ক্ষতি বেশি হয়েছে তাঁদের দু’লাখ টাকা দেওয়া হবে আর যাঁদের ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম, তাঁদের এক লাখ টাকা করে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।