পহেলগাঁওয়ের নৃশংস হামলায় পাক মদতপুষ্ট লস্কর জঙ্গিরা ২৬ জন নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। এই ভয়াবহ ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যেই ভারত তার যোগ্য প্রত্যাঘাত করেছে। মধ্যরাতে অতর্কিতে পাকিস্তানের মাটিতে এয়ার স্ট্রাইক চালিয়ে ভারতীয় সেনা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন জঙ্গিকে খতম করেছে। পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা তাদের শক্তি ও সক্ষমতার একস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে, জল, স্থল এবং অন্তরীক্ষে হামলা চালানোর জন্য একই সঙ্গে সাবধানতা এবং সতর্কতা অবলম্বন। সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তু ছিল শুধুমাত্র জঙ্গি এবং তাদের ঘাঁটি, কোনও সাধারণ নাগরিক নয়। মঙ্গলবার রাত ১টা ৪৪ মিনিটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আম কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট, সংযত এবং অপ্ররোচনামূলক ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহীর কোনও পরিকাঠামোতে আঘাত হানা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং আঘাত হানার ক্ষেত্রে ভারত অসাধারণ সংযম প্রদর্শন করেছে।”
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ বাহওয়ালপুর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এনচ-৫-এর পার্শ্ববর্তী প্রায় ১৫ একর জমি জুড়ে গড়ে উঠেছে জৈশই-মহম্মদ (জেইএম)-এর প্রধান প্রশিক্ষণ ওার কেন্দ্র। জইশের হেডকোয়ার্টার হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাস হামলার সঙ্গে যুক্ত এই জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারত আক্রমণ চালিয়েছিল। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহর লস্কর-ই-তৈবার মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সইদ এই মুরিদকেতেই থাকত। ভারতীয় সেনা মঙ্গলবার রাতে সেখানেও অভিযান চালায়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় সেনা ৯টি স্থানে প্রত্যাঘাত চালিয়েছে, যার মধ্যে চারটি পাকিস্তানে এবং পাঁচটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত। বাহওয়ালপুর, মুরিদকে এবং শিয়ালকোট ছিল মূল লক্ষ্যবস্তু। এছাড়া মুজফ্ফরাবাদ , গুলপুর, ভীমবের, চাক আমরু, বাগ এবং কোটলিও লক্ষ্যে ছিল।গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং উৎস ব্যবহার করে এই নয়টি স্থানের অবস্থান চিহিত করেছিল। তথ্য সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছানোর পর শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রস্তুতি। এরপর মঙ্গলবার রাতে প্রত্যাঘাতের সময় স্ক্যাল্প এবং হ্যামার মিসাইলের মতো বিশেষ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এক বক্তব্যে বলেন যে,যোগ্য জবাব দেয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের (POK) নয়টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযান, যা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত এবং এটি সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনার প্রধানদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা ও পরিকল্পনার ফল।