ভারত থেকে পণ্য কেনার জন্য কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। ভারতের প্রক্রিয়াজাত তেল বা অন্যান্য পণ্য যদি কোনো দেশের জন্য সমস্যার কারণ হয়, তবে তাদের তা কিনতে হবে না। শনিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো শুক্রবার ভারতের উদ্দেশে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারত শুধুমাত্র শোধন করে রপ্তানি করার জন্যই রাশিয়া থেকে তেল কেনে, এর বাইরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কোনও প্রয়োজন নেই ভারতের। এর জবাবে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, যখন বাণিজ্যপন্থী মার্কিন প্রশাসনের কর্মীরা অন্যদের ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ তোলে, তখন তা হাস্যকর হয়ে ওঠে। যদি ভারত থেকে তেল বা শোধিত পণ্য কিনতে সমস্যা থাকে, তবে কিনবেন না। কেউ তো আপনাদের বাধ্য করছে না। তিনি আরও জানান, ইউরোপ এবং আমেরিকা উভয়ই এই শোধিত তেল কেনে। এমন পরিস্থিতিতেও যদি বিষয়টি পছন্দ না হয়, তারা ভারত থেকে কেনার প্রয়োজন নেই।
- আরও পড়ুন এখানে – যুগান্তকারী বিল আনছে কেন্দ্র ! গ্রেপ্তার হলে পদ খোয়াতে হবে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীদেরও!
মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির বাণিজ্যিক সম্পর্কের ফলে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, যা কার্যকর হবে আগামী ২৭ অগস্ট থেকে। এর মধ্যেই ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা ভারতকে নিশানা করে মন্তব্য করেছেন। নয়াদিল্লিকে খোঁচা দিয়ে নাভারো বলেছেন, “রাশিয়ার তেল ভারতের জন্য অত্যাবশ্যক— এটি পুরোপুরি অযৌক্তিক। ওদের (ভারত) ওই তেলের আদৌ প্রয়োজন নেই। আসলে এটি তেল শোধন করে বিক্রির একটি ব্যবসায়িক কৌশল।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের মহারাজা’ বলেও আক্রমণ করেছেন। মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও অভিযোগ করেছেন, “ওদের সঙ্গে আমাদের বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে আমেরিকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া রাশিয়ার তেল কিনে ভারত আমাদের কাছে বিক্রি করে মুনাফা করছে।”
এ পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমেরিকার যদি এত সমস্যা থাকে, তাহলে ভারতের থেকে শোধিত তেল কেনার প্রয়োজন নেই— শনিবার এই মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর। তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে ভারত শিখেছে যে কোনও একটি দেশের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। নির্দিষ্ট একটি উৎসের উপরও নির্ভরতা ঠিক নয়। এদিকে, এই কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে রাশিয়া ভারতকে আরও কাছে টানার চেষ্টা করছে। মস্কো বলেছে, ভারত তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় পণ্য আমেরিকায় প্রবেশে বাধা এলে, রাশিয়ার দরজা সর্বদা খোলা— এমন বার্তাও দিয়েছে মস্কো।