ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছে একাধিকবার। তবে, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে পর্যকদের উপর রক্তক্ষয়ী আক্রমণের পর ভারত চুপ করে বসে থাকেনি। পরিচালিত হয়েছে অপারেশন সিঁদুর। নিজ দেশে থেকেই পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ও বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। অপারেশন সিঁদুর যখন তুঙ্গে পৌঁছ, তখনই ১০ মে, ২০২৫ তারিখে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন।
অনেক মনেই প্রশ্ন ছিল কেন এত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এই সিদ্ধান্তের প্রায় ২০ দিন পর পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। শনিবার সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা ডায়ালগে এর কারণ ব্যাখ্যা করেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। তিনি জানান, ভারত তার কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত তিন দিনের মধ্যে তার সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করেছে। তাই, সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করাই ছিল সঠিক কৌশল।
৭ মে, ২০২৫ তারিখে মধ্যরাতে অপারেশন সিঁদুর শুরু হয়। এই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিশোধ। ঐ হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। এতে ১০০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়, যার মধ্যে জইশ-ই-মহম্মদ নেতা আব্দুল রউফ আজহারও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট কৌশলে আক্রমণ পরিচালনা করে, যার ফলে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কারদু, জাকোবাবাদ, সরগোধা এবং ভোলারির মতো বিমান ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা হয়।
পাকিস্তান অবশ্যই নীরব ছিল না। তাদের পক্ষ থেকেও পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়। ৭ থেকে ১০ মে, ২০২৫ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় তীব্র গুলি বিনিময় হয়, যার ফলে ১৫ জন ভারতীয় অসামরিক নাগরিক এবং একজন সেন প্রাণ হারান। ভারত পাল্টা প্রতিশোধ নিতে দেরি করেনি। ১০ মে, ২০২৫ তারিখে সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনী ব্রম্মস (BrahMos) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আঘাত হানে। এই আক্রমণে পাকিস্ত নূর খান-চাকালা বিমানবন্দর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, যা রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত। বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু ঘটে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ে আনতে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির আবেদন জানায়, যা ভারত গ্রহণ করে।
- আরও পড়ুন — শশী থারুরের কূটনীতি সফল হলো ! ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের প্রতি ‘ভালবাসা’ ভুলতে বাধ্য হল কলম্বিয়া !
সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরে উল্লেখ করেছেন যে ভারত অভিযানে পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে কাজ করেছে। তার মতে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ভারত দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কৌশলের ফলস্বরূপ ভারত আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানব উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলির চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। জেনারেল চৌহান আরও বলেন, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার প্রচেষ্টা করেছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে,পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার শত্রুতামূলক আচরণ পাওয়ার কারণে, বর্তমানে সঠিক কৌশল হবে তাদের থেকে দূরে থাকা।
যুদ্ধবিরতির পরেও ভারত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সেনাবাহিনী পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে পাকিস্তান যদি পুনরায় কোন পদক্ষেপ নেয়, তবে তার কঠোর প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে। অপারেশন সিঁদুর ভারতের শক্তি ও সক্ষমতার সফল প্রদর্শনী। ভারত এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান হলো কঠোর ।