পতন হলো দুই যুগের স্বৈরশাসনের! দামাস্কাস দখল করে ঘোষণা বিদ্রোহীদের! রাজধানী ছাড়লেন প্রেসিডেন্ট আসাদ!
অবশেষে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করেছে। তারা ‘যুগের অবসান’ ঘোষণা করেছে। এর পরপরই দ্রুত শহর ত্যাগ করেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আগে থেকেই আলেপ্পো, হোমসের মতো প্রধান শহরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর বিদ্রোহীরা দামাস্কাসের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে তারা সেনাবাহিনীর সাথে তীব্র লড়াইয়ে জড়িত হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, আসাদ একটি বিমানে করে অজ্ঞাত কোনো গন্তব্যে পালিয়ে গেছেন। এ তথ্য রয়টার্সকে দুই জ্যেষ্ঠ সেনা অফিসার জানিয়েছেন। এদিকে, সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজি আল-জালালি বলেছেন, তাদের সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত।
শনিবার, বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে যে তারা দামাস্কাসকে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে। এর জবাবে সেনাবাহিনী প্রতিরোধ চালিয়ে যায়। ইতোমধ্যে, শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভয়ে অনেক নাগরিক সিরিয়া ত্যাগ করছেন। বিদ্রোহীদের আক্রমণে উত্তর সিরিয়ার প্রায় দুই লক্ষ আশি হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। বিদ্রোহীরা যখন দামাস্কাস দখলের পথে এগোচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট আসাদ রাজধানী ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়াকে শক্ত হাতে শাসন করছেন। তবে ২০১১ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে সিরিয়া উত্তাল হয়ে ওঠে। একনায়ক হঠাও এবং গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে আকাশ-বাতাস কেঁপে ওঠে এবং গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১১ সাল থেকে চলমান এই রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ১৩ বছর পরও থামেনি। এই সময়ে সিরিয়া ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। আসাদকে উৎখাত করতে ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ) নামে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ময়দানে নামে। কুর্দ বাহিনীর পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে অসম যুদ্ধ শুরু হয়। আলেপ্পো প্রথমে হাতছাড়া হলেও, ২০১৬ সালে আসাদ বাহিনী তা পুনরুদ্ধার করে। ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনে বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়। পরবর্তীতে, মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলির সমর্থনে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে পালটা আঘাত হানতে শুরু করে। সবমিলিয়ে, রাশিয়া, আমেরিকা, ইরানের মতো শক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের খেলায় বোড়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের জন্ম হয় ১৯৬৫ সালে, দামেস্কে। তার শৈশব দামেস্কেই কেটেছে এবং সেখানেই তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে চক্ষুবিজ্ঞানে শিক্ষা নেন এবং চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন। তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় দক্ষ।
হাফিজ আল-আসাদের ছোট ছেলে বাশারের উত্তরসূরি হওয়ার কথা ছিল না। অনেকে মনে করেছিলেন, হাফিজের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে বাসেল ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে বাসেলের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ফলে সিরিয়ার রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। বাশার তখন লন্ডনে চক্ষুবিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশোনা করছিলেন এবং বাবার নির্দেশে দেশে ফিরে সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং রাজনীতিতে জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন।
এভাবে, বাশার আল-আসাদকে তার বাবা একজন শাসক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হন।
গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখেরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ উদ্বাস্তু হয়েছেন। সিরিয়ায় ইতিহাসের এক অত্যন্ত মর্মান্তিক মানবিক সংকটের সূচনা হয়েছে। এসবের পরেও আসাদের কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। তিনি নিজের ক্ষমতা আরও দৃঢ় করতে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। অবশেষে, আজ পরাজিত হয়ে দেশ ত্যাগ করতে হলো স্বৈরাচারী বাশার আল আসাদকে।