পুলিশের বাপ-মা মরা দায় পড়েছে তৃণমূলকে ভোটে জেতানোর!ভাঙড়ের সভা বাতিল নিয়ে তোপ শুভেন্দু অধিকারীর !
ভাঙড়ে শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা পুলিশ শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছে। বুধবার সভা বাতিলের নোটিশ পেয়ে পুলিশের উপর পাল্টা আক্রমণ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানান— অন্যায়ভাবে সভা বাতিলের জবাব তিনি ৪ তারিখের পরে দেবেন। ভাঙড়ের যে মাঠে বুধবার সভা করার কথা ছিল, সেখানে ভোটে জিতে পাল্টা কৃতজ্ঞতা সভা করবেন বলে জানান। শুভেন্দুর দাবি, সেই সভা পুলিশ আটকাতে পারবে না, প্রয়োজনে তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে সভা করবেন।
বুধবারে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভাঙড়ের এক স্কুল মাঠে শুভেন্দুর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেছেন, তাঁর দল নিয়ম মেনে ২৬ মে সভার অনুমতি নিয়েছিল। রাজ্য পুলিশের সুবিধা অ্যাপের মাধ্যমে সভা বা মিছিলের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল, এবং পুলিশের তরফে কোনও আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ প্রায় শেষ হওয়ার সময়, পুলিশ সভার আয়োজক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি। অবশেষে, বুধবার সকাল ১১টায় পুলিশ একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায় যে, ভাঙড়ে বিজেপির সভা অনুষ্ঠিত হতে পারবে না, যা শুভেন্দুকে ক্ষুব্ধ করেছে।
ভাঙড়ের মাঠে তিনি শাসক দল তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আসন্ন ১ তারিখের নির্বাচন একটি জীবন-মরণ ভোট হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আমাদের সকল কর্মী এবং তৃণমূল বাদে অন্যান্য বিরোধীরা, আমি বলব সবাই মিলে ভোটার এবং এজেন্টদের জন্য প্রতিরোধের দেওয়াল তৈরি করুন। সকাল থেকেই শুরু করুন, যাতে আমরা প্রয়োজন মতো হস্তক্ষেপ করতে পারি। প্রথমে ভোট দিন, তারপর জলপান করুন। আমি আপনাদের বলছি, এই মাঠেই ৪ তারিখের পর আমরা কৃতজ্ঞতা সভা করব। যদি পুলিশ বাধা দেয়, তাহলে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে আসব।”
বুধবার সভার মাঠে শুভেন্দু একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন এবং রাজ্য পুলিশের উপর আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “পুলিশ এমন এক সময়ে আমাদের সভা বাতিল করেছে যখন আমাদের কোনো বিকল্প নেই। তারা বলেছে যে, সভাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের সভা চলছে।” পুলিশের চিঠি হাতে নিয়ে শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন, “আমি এক দিক দিয়ে এসেছি, আমাদের দলের লোকেরা অন্য দিক দিয়ে এসেছে, কিন্তু কোথাও কোনো সভার চিহ্ন নেই। যদি ১০০ মিটারের মধ্যে সভা হতো, তাহলে মাইকের শব্দ শোনা যেত, কিন্তু কি শোনা যাচ্ছে?” এবং বলেন, “মমতা ব্যানার্জির পুলিশ কতটা প্রতারক এবং মিথ্যাবাদী এই ঘটনা তার প্রমাণ।”
শুভেন্দু পুলিশের আচরণের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “অনেক দিন ধরে আমরা বলছি, ভোটে তৃণমূল মাঠে নেই। আসল লড়াই হচ্ছে পুলিশ এবং বিজেপির মধ্যে। পুলিশ এমন আচরণ করছে যেন তারা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পায় না, যেন তাদের উপর একটি দায়িত্ব আছে তৃণমূলকে বাঁচানো এবং ভোটে জেতানোর।”
শুভেন্দুর বুধবার দুপুর ৩টে নাগাদ ভাঙড়ে একটি সভা আয়োজনের কথা ছিল। সেই সকালে, তিনি এবং তাঁর দল সামাজিক মাধ্যমে এই ঘোষণাটি করেন। শুভেন্দুর দাবি, মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ সভার বিষয়ে উদাসীন ছিল, কিন্তু বুধবার সকালে তারা হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতেও যাদবপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গাঙ্গুলির উপস্থিতির কথা ছিল। বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ভাঙড়ের তাঁদের দলের ভোটাররা, যাঁরা ‘এই এলাকায় প্রায় সংখ্যালঘু’, তাঁরা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন সেজন্য চার-পাঁচ হাজার মানুষ নিয়ে একটি মাঝারি মাপের সভা করার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে। শুভেন্দু জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুবিধা হয়নি। বরং কমিশন বলেছে, ‘পুলিশ যদি আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আপত্তি জানায়, তাহলে কমিশনের কিছু করার নেই।’
শুভেন্দু বলেছেন যে তাঁরা আইন মেনে চলেন, তাই অনুমতি না পেলে তাঁরা সভায় ভাষণ বা বক্তৃতা করেননি। আশপাশের গ্রামের মানুষদেরও দ্রুত সভাস্থলে আসা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ হল, এই পদ্ধতিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল রাজ্যের বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ক্ষতি করছে।
উল্লেখ্য যে, বিজেপি যেখানে বর্তমান নির্বাচনে সমতল খেলার মাঠ নেই বলে অভিযোগ করছে, সেখানে তৃণমূলও একই রকম অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে আনিয়েছিল। বাংলায় নির্বাচনের সময় শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের বাড়িতে ইডি ও সিবিআই পাঠিয়ে তল্লাশি চালানোর ঘটনাকে ইচ্ছাকৃত ভোটের আগে বিরোধীদের দুর্বল করার চেষ্টা হিসেবে দেখিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল নীরব ছিল।