মমতাকে চিনতে দেরি করেছি,অনেক আগেই বিজেপিতে যোগ দেয়া উচিত ছিলো !আক্ষেপ শুভেন্দুর!
চার বছর আগে তিনি তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। শুক্রবার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে তাঁর বিজেপিতে আরও আগে যোগ দেওয়া উচিত ছিল। এই ঘটনাচক্র ঘটেছে দিলীপ ঘোষের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত রেলশহর খড়্গপুরে।
বোধোদয়ের সাথে সাথে শুভেন্দু এদিন ‘আত্মগরিমা’ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার দাঁতনে মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সভা করেছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টা পরে, সেই দাঁতনেই একটি কর্মি সম্মেলনে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘মমতা বলছে উনি আমাকে তৈরি করেছেন? আপনি কে, হরিদাস পাল? আপনি ১৯৯৮ সাল থেকে দল করছেন। আমি ১৯৯৫ সাল থেকে কাউন্সিলর।”
সেই দিন সন্ধ্যায় মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের খড়্গপুর শহরের ঝাপেটাপুরে বিজেপির বিজয় সংকল্প সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন শুভেন্দু। গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনে বিজেপি জয়লাভ করেছিল। তবে রেলশহরে বিজেপির লিড ছিল ৪৫ হাজার। ২০১৯ সালের বিধানসভা উপ-নির্বাচনে শুভেন্দুর নেতৃত্বে রেলশহরের বিধানসভা আসনে তৃণমূল প্রথমবার জিতেছিল, এবং প্রদীপ সরকার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন।
এবার খড়্গপুরে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলকে বিদ্ধ করতে অন্য এক স্বীকারোক্তি করলেন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি বিজেপি নেতাদের স্যালুট জানাই। আপনারা যা আগে বুঝেছেন, আমার তা বুঝতে সময় লেগেছে। আপনারা ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে কুনার হেমব্রম, দিলীপ ঘোষদের জিতিয়ে তালা মেরে দিয়েছিলেন। এই পিসি উপনির্বাচন তো হয়নি!”
নভেম্বর ২০১৯-এ, এই প্রতারক পিসি এবং তার চোর ভাইপো কি খড়্গপুরে প্রচারে এসেছিলেন? না, আসেনি। আমি নিজে ঘুরে ঘুরে প্রদীপ সরকারকে জিতিয়েছি। মানুষ প্রদীপ সরকারকে নয়, আমাকে ভোট দিয়েছে। শুভেন্দু দাবি করেন যে, প্রদীপ সরকার জয়ী হওয়ার পর, তিনি নিজে তৃণমূলের বন্ধ কার্যালয়ে গিয়ে তালা খুলেছিলেন।
মেদিনীপুরের আবেগ উস্কে দিতে শুভেন্দু এদিন বলেন, “পিসি বলেন, মেদিনীপুরে গদ্দার জন্ম নেয়। কিন্তু মেদিনীপুরে গদ্দার নয়, বিদ্যাসাগর জন্ম নেন। এখানে মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসু জন্মেছেন, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছে। আর আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গদ্দার। যিনি রাজীব গান্ধীকে পরিচয় দিয়ে ছুরি মেরেছেন, যিনি অটলবিহারী বাজপেয়ীকে আশ্রয় দিয়ে ছুরি মেরেছেন।”
এই দিনে, মেদিনীপুর আসনের মূল কেন্দ্র খড়্গপুর হওয়ার কথা বারবার বলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি খড়্গপুরের পুলিশের উপর আক্রমণ করেছেন। সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা তুলে ধরে খড়্গপুরের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, “মমতা পুলিশের আমলে খড়্গপুরে গত মাসে দুই ব্যবসায়ী দুইবার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, যা ভাবতে গেলে লজ্জা লাগে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিডিওরা আইসিদের সাথে মিলে ব্যালট ছাপিয়ে ভোট দিয়েছে। আজ খড়্গপুরে ভোট হলে শেখ হানিফের ওয়ার্ড ছাড়া অন্য কোনো ওয়ার্ড তারা পাবে না, সব বিজেপি জিতবে।”
শুভেন্দু বলেছেন, “পরিবর্তন ঘটবে কি? ২৫ মে মিনি ইন্ডিয়া খড়্গপুরে ৫০ হাজার নয়, ১ লক্ষ লিড চাই। খড়্গপুর জিতবে। অন্যরা তো থাকবেই। কিন্তু খড়্গপুর বড় মার্জিন তৈরি করবে। আপনারা পারবেন।”
এই দিনে, অঙ্কের সমীকরণে বিজেপিতে ৯ বছর পর ফিরে এসেছেন তৃণমূলে গিয়েছিলেন এমন প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি জগদম্বা প্রসাদ গুপ্ত। পুর প্রতিনিধি মুকেশ হুমনেও ঘরে ফিরেছেন। এছাড়াও, প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক রামাশিস সিংহ দলে যোগ দিয়েছেন।