‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান টাকা নিয়ে সঙ্গ দেয় পুলিশের ইভিএম বদলের ছকে !’ বিস্ফোরক সৌমিত্র খাঁ !
বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী এবং বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ নিজে লোকসভা ভোটে ভোট দেননি। তাঁর দাবি, তৃণমূল তাঁকে আটকে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছিল, যা তিনি ব্যর্থ করে দিয়ে বিষ্ণুপুরবাসীকে অবাধে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন। ভোটের পর, তিনি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন যে, রাজ্য পুলিশ স্ট্রং রুমের সিসি ক্যামেরা পরিবর্তন করে ইভিএম বদলের চেষ্টা করেছিল এবং এই কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাহায্য করেছিল। সৌমিত্র খাঁ জানান, তিনি এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল বলছে, পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিজেপি প্রার্থী আগে থেকেই দায় নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের ভোট এখনও ইভিএমে বন্দি আছে বিষ্ণুপুর কেজি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্ট্রং রুমে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সেই স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা দেখছে। বাইরে রাজ্য পুলিশ মোতায়েন আছে। সিসি ক্যামেরা দিয়ে সজ্জিত স্ট্রং রুমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা কঠোর নজরদারি করছেন। সোমবার দুপুরে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী হঠাৎ সেখানে আসেন। সৌমিত্র নিজের ফোন থেকে ফেসবুক লাইভ শুরু করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ স্ট্রং রুমের সিসি ক্যামেরা পরিবর্তন করে ইভিএম বদলের চেষ্টা করছে।’’ স্ট্রং রুম চত্বরে নিরাপত্তায় থাকা রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের উদ্দেশে তাঁকে ‘চোর-চোর’ বলতে শোনা যায়। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও সমালোচনা করেন। স্ট্রং রুমের পাশে থাকা গাড়িগুলি দেখিয়ে সৌমিত্র দাবি করেন, ওই গাড়িগুলি দিয়েই ইভিএম বদলের ছক কষা হয়েছিল রাজ্য পুলিশের তরফে।
সৌমিত্রের লাইভ ভিডিওটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে, সৌমিত্র দাবি করেন যে, “স্ট্রং রুমের দরজার কাছে রাজ্য পুলিশের প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু ছবিতে দেখা গেছে, ইভিএম সংরক্ষিত স্ট্রং রুমের সামনে এক রাজ্য পুলিশ আধিকারিক উপস্থিত হয়েছেন। সিসি ক্যামেরা পরিবর্তন করে ইভিএম পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এই ষড়যন্ত্রে স্ট্রং রুমের নিরাপত্তায় নিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানও বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জড়িত ছিলেন।”
সৌমিত্র খাঁ-এর অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। বিজেপি প্রার্থীর প্রাক্তন স্ত্রী তাঁর উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়েছেন। তিনি বলেন, “রবিবার নিজে স্ট্রং রুম পরিদর্শন করে এসেও সৌমিত্র খাঁ এমন অভিযোগ করেননি! সোমবার নিজের পরাজয় সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়ার পর, হতাশায় তিনি নিজের উপর থেকে দায় সরিয়ে এই সব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে বিষ্ণুপুর লোকসভার রিটার্নিং অফিসার এবং বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক নকুল মাহাতো জানান, ‘‘অভিযোগ পেয়েই আমরা স্ট্রং রুমে আসি। তাঁর অভিযোগ এবং স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা যাচাই করা হচ্ছে।’’
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি সৌমিত্রের অভিযোগের সারবত্তা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, “প্রাপ্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিয়ম মেনে স্ট্রং রুমের নিরাপত্তা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটেছে। এবং যে পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি কোনও অন্যায় কাজ করেননি।”