গ্রেফতার সন্দীপ ঘোষ! ১৬ দিন কড়া জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই ধরল আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে!
সন্দীপ ঘোষ, আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন। ১৬ অগস্ট থেকে তিনি টানা ১৫ দিন সিবিআই-এর জেরায় ছিলেন। গত শনিবার ও রবিবার তাঁকে জেরা করা হয়নি, কিন্তু সোমবার তাঁকে আবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডাকা হয়। সন্ধ্যায়, সিবিআই অফিসাররা তাঁকে নিজাম প্যালেসে নিয়ে যান, এবং তারপরেই তাঁর গ্রেফতারের খবর জানানো হয়।
সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারির পর আরও তিন জনকে পাকড়াও করল সিবিআই। ধৃতদের নাম সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলি। এঁদের মধ্যে আফসর আলি সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন।এই আফসার মেডিক্যাল বর্জ্য বাংলাদেশে পাচারে সন্দীপ ঘোষকে সাহায্য করতো।
৯ অগস্ট আরজি কর মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে, তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ১৫ অগস্ট সিবিআই প্রথম বার তাঁকে তলব করে, কিন্তু সেদিন সন্দীপ হাজিরা দেননি। পরের দিন তিনি রাস্তা থেকে সিবিআইয়ের গাড়িতে উঠেন এবং সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৪ অগস্ট পর্যন্ত টানা ১৪ দিন তাঁকে সিজিওতে তলব করা হয়, এবং প্রতিদিন ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা সিবিআই দফতরে অবস্থান করতে হয় তাঁকে।
গত ২৫ অগস্ট সকালে, সিবিআইয়ের একটি দল সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ৭৫ মিনিট অপেক্ষার পর, সন্দীপ দরজা খুলে দেন এবং সিবিআই কর্তারা ভিতরে প্রবেশ করেন। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে, সিবিআই আরজি করে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা তদন্ত করছে। এছাড়াও, ওই হাসপাতালের আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তের দায়িত্বও সিবিআইকে দিয়েছে আদালত। উভয় মামলায়, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সিবিআইয়ের নজরদারিতে আছেন। ২৪ অগস্ট আর্থিক অনিয়মের মামলায় সিবিআই এফআইআর দায়ের করে, এবং সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই সন্দীপের বাড়িতে যায়। আদালতের অনুমতি নিয়ে, সন্দীপ-সহ সাতজনের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করা হয়েছে সিবিআই দ্বারা।
মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আরজি কর হাসপাতালে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে আবাসিক চিকিৎসক থেকে ছাত্রছাত্রীরা সকলেই সন্দীপের অপসারণ বা পদত্যাগের দাবি জানায়। আন্দোলনের চাপে ১২ অগস্ট সন্দীপ পদত্যাগ করেন এবং স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই সন্দীপকে কলকাতার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়। সেখানেও তাঁর অপসারণের দাবি উঠে। এদিকে, মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট সন্দীপকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সন্দীপ সেই থেকে ছুটিতে ছিলেন। পরবর্তীতে, আন্দোলনের চাপে তাঁকে ওই পদ থেকেও সরানো হয়।
আরজি কর হাসপাতালে দেহ উদ্ধারের পরই সেমিনার হলের পাশের একটি ঘরের দেওয়াল সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলা হয়। অনেকের অভিযোগ অনুযায়ী, এই কাজে সন্দীপের নির্দেশ থাকতে পারে। সংস্কারের কাজ কেন এত তাড়াতাড়ি শুরু হল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা সন্দীপকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে, আরজি কর হাসপাতালে তিন বছর ধরে আর্থিক দুর্নীতি চলার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকার এই তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে। পরদিনই উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশ থেকে সিবিআইয়ের হাতে ন্যস্ত হয়। আরজি কর কলেজ ও হাসপাতালে বেনিয়মের একাধিক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। মর্গ থেকে দেহ উধাও হওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালের জৈব বর্জ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। এই অভিযোগ প্রথম তুলে ধরেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। সন্দীপ ঘোষ, দেবাশিস সোম, সঞ্জয় বশিষ্ঠ এবং বিপ্লব সিংহের নাম এই অভিযোগে জড়িত।