শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ধৈর্য হারালেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক!সামলে নিলেন সুজিত বসু!
কেউ ভেঙে পড়লেন কান্নায়, কেউ পা ধরতে বাকি রাখলেন।এভাবেই সন্দেশখালিতে নানা রকম অভিযোগের ডালি নিয়ে মন্ত্রী, বিধায়কদের সামনে ক্ষোভ, অভিযোগ উগরে দিলেন স্থানীয়েরা। সন্দেশখালিতে উত্তপ্ত আবহের মধ্যেই শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সব অভাব অভিযোগ শুনলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু । আশ্বাস দিলেন সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে,সব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
শনিবার সকালে দুই মন্ত্রী প্রথমে ধামাখালিতে যান। সেখান থেকে কালিন্দী নদী পেরিয়ে যান সন্দেশখালি। এরপর টোটো নিয়ে পাত্রপাড়া হয়ে কাছারিপাড়ায় যান সুজিতেরা। সেখানে পা রাখতেই মন্ত্রী-বিধায়কদের ঘিরে ধরে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন স্থানীয়েরা। কেউ কেউ আবার ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ মূলত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের শাগরেদ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার ও শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে। একের পর এক চাষের জমিতে কী ভাবে জোর করে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে সুজিত-পার্থদের কাছে।
সন্দেশখালির ক্ষোভ প্রশমনে ঠান্ডা মাথাতেই সারাদিন একের পর এক অভিযোগ শুনছিলেন সুজিত-পার্থেরা। সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ বেলায় এসে অবশ্য ধৈর্যচ্যুতি হয় তাঁদের। ধৈর্য হারালেও সামলে নেন দুজনে । দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পরে যখন পার্থ এবং সুজিত বেরোচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁরা খবর পান যে, বিডিও অফিসের উল্টো দিকে কিছু মহিলারা তাদের ওপর ‘নির্যাতনের’ অভিযোগ জানাতে থাকেন সেচমন্ত্রী এবং দমকলমন্ত্রীর কাছে। এই সময় এক মহিলা প্রশ্ন করেন, শাহজাহানকে কবে গ্রেফতার করা হবে? প্রশ্ন শুনেই পার্থ ভৌমিক বলেন,আপনাকে নিশ্চয়ই এই কথাটা কেউ শিখিয়ে দিয়েছেন!পার্থ বলেন ইডি (ED) বলতে পারবে কবে শাহজাহান গ্রেফতার হবে। শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কিছু করণীয় নেই, তারও ব্যাখ্যা দেন পার্থ । তবে মন্ত্রীর শিখিয়ে দিয়েছেন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ মহিলারা হইচই শুরু করে দেন। শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন আর এক মন্ত্রী সুজিত বসু ।
মূলত শেখ শাহজাহান ও শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিন,যাকে এলাকায় ‘সিরাজ ডাক্তার’ নামে সেনা মানুষ,তার বিরুদ্ধে অভিযোগে মুখর সন্দেশখালিবাসীর বড় অংশ। ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের শিবিরে গিয়েও অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে সেই শেখ সিরাজউদ্দিন তৃণমূলের কোনও পদে নেই বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ও সুজিত বসু ।
শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ভাই সিরাজউদ্দিনের জন্য ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে এলাকার জমির ধরণ । এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের । তাঁদের আরও অভিযোগ, একের পর এক ফসলের ক্ষেত্র গায়ের জোরে দখল করে বানানো হয়েছে অবৈধ মাছের ভেড়ি। পাশাপাশি, জোর করে কৃষি জমি দখল করে অনুগতদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রচুর । বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে শাহজাহান-সিরাজের বাহিনীর দাপটে চাষের জমি ছাড়তে বাধ্য হওয়া গ্রামবাসীদের অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করছেন।
এদিকে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা বলে সুজিত বসু বলেন, আমাদের দল কাউকে ছাড় দেয়না । কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। তবে শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি সুজিত।
সন্দেশখালির আন্দোলন প্রসঙ্গে পার্থ ভৌমিকের দাবি, কিছু লোক অন্যায় করেছে এটা ঠিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে যাতে কেউ কালি লাগাতে না পারে, তার জন্য রাস্তায় নেমেছিল গ্রামবাসীরা, ওরা তৃণমূলের শুদ্ধিকরণের জন্য রাস্তায় নেমেছিল।মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর পৌঁছতেই তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওঁরা যে আন্দোলন করছেন সেটা ঠিক। এটাও বলেছেন, ওঁরা আমার লোক। ওঁরা যা বলছেন, সেটা করো। দিদি সেই জন্যই আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন।
তবে মন্ত্রীদের আশ্বাসে সন্দেশখালির স্থানীয়দের কেউ কেউ ভরসা করতে পারছেন না। তাঁদের যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, এক মাসের মধ্যে কী ভাবে তা পূরণ করবেন মন্ত্রীরা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।