আরজি কর থেকে ৫১ জন ডাক্তারের সাসপেনশন হাইকোর্টে স্থগিত! সিদ্ধান্ত নেবে সরকার!
হুমকি সংস্কৃতির অভিযোগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৫১ জন জুনিয়র ডাক্তারকে নিলম্বিত করা হয়েছিল। মঙ্গলবার, কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া সাসপেনশনের নির্দেশ বৈধ নয়। বিচারপতি কৌশিক চন্দের অবকাশকালীন বেঞ্চ বলেছেন, এই সাসপেনশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত, গত ৫ অক্টোবর নেওয়া সাসপেনশনের রেজোলিউশন কার্যকর হবে না। উল্লেখ্য, সোমবার নবান্নে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সাসপেনশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, কীভাবে রাজ্যকে না জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। মঙ্গলবার হাই কোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে।
মঙ্গলবার আদালতে সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকদের আইনজীবী অভিযোগ করেন যে, কেন তাঁর মক্কেলদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের রেজোলিউশনে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ওই ৫১ জন চিকিৎসককে যথাযথ কারণ ছাড়াই সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরজি করের আইনজীবী দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ আসলে কাউকে সাসপেন্ড করেনি এবং ওই রেজোলিউশন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে, যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সোমবার নবান্নের বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন যে, আলোচনা ছাড়াই কিছু জুনিয়র ডাক্তারদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কি ‘থ্রেট কালচার’ নয়? এবং এর জন্য আরজি করের অধ্যক্ষকে তিরস্কার করেন। জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো দাবি করেন যে, একটি নির্দিষ্ট কমিটি তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্পষ্ট করে দেন যে, কোনও পক্ষপাতিত্ব মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “এটা কি থ্রেট কালচার নয়? তদন্ত ছাড়া কাউকে সাসপেন্ড করা যাবে না। ইচ্ছেমতো কাজ করা যাবে না। কেউ কাউকে ভয় দেখাবেন না। আমি ক্ষমতায় থাকলেও ভয় দেখাতে পারি না।”
মঙ্গলবার হাই কোর্টে আরজি করের আইনজীবী দাবি করেছেন যে, কর্তৃপক্ষ কাউকে সাসপেন্ড করেনি। রেজোলিউশনটি রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। এরপর বিচারপতি চন্দ ঘোষণা করেন, সাসপেনশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নেবে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে উত্থান হয়েছে আন্দোলন। গত সেপ্টেম্বরে, আরজি কর হাসপাতালের কলেজ কাউন্সিল ৫১ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করে।
এই ৫১ জনের বিরুদ্ধে হাসপাতালে ‘থ্রেট কালচার’ চালানো এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা দেন, এবং অভিযুক্ত কয়েকজনের নামের তালিকা প্রদান করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তালিকাভুক্ত অভিযুক্তদের ডেকে পাঠায় এবং পরে তাদের সাসপেন্ড করে। কয়েকজনকে হস্টেলে প্রবেশেও বাধা দেওয়া হয়। সাসপেনশনের বিরুদ্ধে ওই ৫১ জন চিকিৎসক হাই কোর্টে আপিল করেন। অন্যদিকে, হস্টেলে প্রবেশে বাধা পাওয়ায়, ৩১ জন জুনিয়র ডাক্তার ১৮ অক্টোবর হাই কোর্টে যান। তারা অভিযোগ করেন যে, সাসপেনশনের কারণে পুলিশ তাদের হস্টেলে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এই মামলা দায়েরের অনুমতি প্রদান করা হয়। হাই কোর্ট ঘোষণা করে যে, সমস্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নেবে।