মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা পুলিশের ১০টি ভুল পদক্ষেপ- বাড়িয়ে দিলো আন্দোলনে ঝাঁঝ!
৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুসারে, খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ এবং বিদেশেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে মামলা করেছেন এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার গুরুত্ব নিয়ে বিভক্ত, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের আরজি কর ইস্যুতে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান প্রকাশ করে।
আরজি কর ঘটনার পর দশ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করছে যে এখনও প্রকৃত অপরাধীরা গ্রেফতার হয়নি। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিআই আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের দিকে নজর রাখছে। সুপ্রিম কোর্টও সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজ্যের মানুষের মধ্যে সন্দীপ ঘোষের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, আরজি কর ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বড় ভুলগুলি দেখা যাচ্ছে।
১। আরজি কর হত্যাকাণ্ডকে ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ
আরজি কর প্রসঙ্গে অনেক আন্দোলনকারী মনে করছেন যে হাসপাতালের ভেতরেই এক ডাক্তারের মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এ নিয়ে বিরোধী বিজেপি এবং বামফ্রন্ট প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিল। প্রশাসন খুন ও ধর্ষণের ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছিল, যার ফলে প্রথম ফোনটি আত্মহত্যা বলে বাড়িতে গিয়েছিল। এফআইআর দায়ের করতেও দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে কঠোর ভাবে বিচার করেছে।
২। একদিকে বাবা-মায়ের অপেক্ষা অন্যদিকে দ্রুত শেষকৃত্য
প্রশাসন নির্যাতিতার নিহত দেহ তিন ঘণ্টা ধরে তার বাবা-মাকে দেখতে দেয়নি। তারা মেয়ের মৃতদেহের জন্য হাসপাতালে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের অবগত না করেই দেহটি বাড়িতে নিয়ে গেছে। নির্যাতিতার মা অভিযোগ করেছেন যে কলকাতা পুলিশ দ্রুত তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন যে কলকাতা পুলিশ সঠিক সময়ে তদন্ত করেনি এবং তদন্তে গড়িমসি করেছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ দ্রুত শেষকৃত্য করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল।
৩। তদন্তে অবহেলা ও ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ
যখন চিকিৎসকরা কলকাতা পুলিশের তদন্তে গাফিলতির জন্য সরব হয়েছিলেন, তখনই পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বিতর্ক তীব্র হয়ে ওঠে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণের প্রস্তাব দেন, যা নির্যাতিতার পরিবার ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
৪। আরজি করে সংস্কার কাজ
আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু সেই হলের পাশেই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে ভাঙচুর শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন যে প্রশাসন প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছে, যার ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
৫। সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে জটিলতা
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার পর থেকে চিকিৎসকরা সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছিলেন। ঘটনার কিছু দিন পরে, পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়, যা নিয়ে ডাক্তারি ছাত্র এবং জুনিয়ার ডাক্তাররা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হন। ক্ষোভ হাসপাতাল পেরিয়ে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে, হাইকোর্টের নির্দেশে সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানো হয়, কিন্তু ততক্ষণে আরজি করের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে।
৬। ডাক্তারদের দায়ী করা
আরজি কর ইস্যুতে চিকিৎসকরা প্রথম থেকেই আন্দোলনে নেমেছিলেন। তারা প্রথমে নিরাপত্তা দাবি করে সোচ্চার হন। কিন্তু প্রশাসন বলছে, তাদের আন্দোলনে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ধর্মঘটের ফলে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে – এই অভিযোগে চিকিৎসকরা আরও ক্ষুব্ধ হন। তারা জানান, পরিষেবা বন্ধ নেই, বরং সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা চালু রেখেছেন। তবে আরজি কর আন্দোলনে দেশের চিকিৎসকদের সমর্থন থাকায় পরিস্থিতি অনেকটা আন্দোলনকারীদের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৭। স্বাধীনতা দিবসের রাতে আরজি করে ভাঙচুর
গত ১৪ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে মহিলাদের এক রাত দখলের কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছিল। সেই রাতে, কিছু দুষ্কৃতী আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়, যার ফলে পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই হামলা ঠেকাতে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
৮। ডার্বি বাতিল
আরজি কর কাণ্ডের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিরাপত্তার অজুহাতে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ম্যাচ বাতিল করে দেয়। ফুটবলপ্রেমী বাঙালিদের কাছে এটি ছিল এক বড় আঘাত। এর প্রতিবাদে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
৯। সোশ্যাল মিডিয়াকে তোপ
আরজি কর ইস্যুতে সংগঠিত আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা ছিল প্রধান। তবে রাজ্য পুলিশ নেটিজেনদের নোটিশ পাঠানো শুরু করে, যা সুপ্রিম কোর্টের তীব্র বিরোধিতা পায়। অনেকে মনে করেন, নেটিজেনদের কণ্ঠরোধ করার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ ভুল।
১০। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ
আরজি করা ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই রাস্তায় নেমেছিলেন, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ভুল বার্তা পৌঁছে দেয়। কারণ তারা এই বিষয়টিকে তাদের বিরুদ্ধে হিসেবে দেখে। এছাড়াও, প্রকাশ্যে মমতা পুলিশের সমালোচনা করেছেন, যদিও তিনি নিজেই পুলিশ মন্ত্রী। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বও তাঁর উপর ন্যস্ত।