তিন ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলী জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা সংগঠনের নেতার সঙ্গে সন্দীপের ছবি প্রকাশ্যে!
আমরণ অনশন তোলার পাঁচ দিন পরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে গণকনভেশন আয়োজন করেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের সদস্যরা। সেখানে ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো একে একে ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ তুলেছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের বিপরীতে শনিবার নতুন সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন আত্মপ্রকাশ করেছে। তার তিন ঘণ্টা পরেই একটি ছবি প্রকাশ পেয়েছে যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ছবিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠনের আহ্বায়ক শ্রীশ চক্রবর্তীকে দেখা যাচ্ছে।
অনিকেত এবং তাঁর সহযোগীরা ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, “রাজ্য প্রশাসন যদিও ‘থ্রেট কালচার’কে দুঃখজনক বলে মনে করে, তবুও তারা একপক্ষের সমর্থন করছে।” দেবাশিস সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উপর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন, বলেন, “বৈঠকের পর মনে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী একপক্ষ নিয়েছেন।” কিঞ্জল গণকনভেশনে উপস্থিত সকলকে পক্ষ নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, বলেন, “এখন সময় এসেছে পক্ষ নেওয়ার, ‘থ্রেট কালচারে’ অভিযুক্ত সংগঠনের পক্ষে নাকি অন্য পক্ষে।”
প্রসঙ্গত, ‘থ্রেট কালচার’ অভিযোগে আরজি কর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ৫১ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল। গত সোমবার এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে নবান্নে বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেন। পরদিন কলকাতা হাই কোর্ট আরজি করের সিদ্ধান্তটি স্থগিত করে দেয়। নতুন সংগঠনে সেই ৫১ জনের অনেকেই দেখা গেছে। এই সংগঠন নিয়ে জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট প্রশ্ন তুলেছে, এবং তাদের সংগঠন নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের একাংশ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে। সম্প্রতি, তারা দাবি করেছে যে ২০২১ সালে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী আবাসনে মধুমিতা ঘোষের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এই ঘটনায় মেয়েটির বাবা যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, সেই শাহবাজ শেখ বর্তমান আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
গণকনভেশনে ‘থ্রেট কালচার’ ছাড়াও আরজি কর হাসপাতালের নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবি উঠেছে। অনিকেত এবং অন্যান্যরা আরজি কর মামলায় সিবিআই দ্বারা দেওয়া চার্জশিটের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশের বক্তব্য এবং সিবিআইয়ের চার্জশিটের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অনিকেতের ভাষায়, “সিবিআইয়ের চার্জশিট কলকাতা পুলিশের বক্তব্যের কার্বন কপি বলে মনে হচ্ছে।” তিনি আরও জানতে চেয়েছেন, “খুনটি কেন করা হলো? একজনের পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।” সিবিআইয়ের চার্জশিটে ‘মূল অভিযুক্ত’ হিসেবে একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার চিকিৎসক খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত।
গণকনভেনশনে অনিকেত বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা আছে এবং আমরা এখনও তাদের উপর ভরসা রাখি। তবে এই বিষয়টি বলার পরেও, আমরা যা দেখছি তা হল, সুপ্রিম কোর্টে কর্মবিরতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সিবিআই রিপোর্টকে ভয়ঙ্কর বলা হলেও, আমরা কোনো সমাধান পাচ্ছি না।”
জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি, শনিবারের গণকনভেশনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’ মঞ্চে যোগ দেওয়া অনেক সাধারণ মানুষও শনিবারের কনভেশনে এসেছিলেন। জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন তারা। এটি দেখে দেবাশিস বলেন, “আমাদের আন্দোলন কেবল জুনিয়র ডাক্তারদের নয়, এটি একটি নাগরিক আন্দোলন।”