অনশন প্রত্যাহার, মঙ্গলে সর্বাত্মক চিকিৎসক ধর্মঘটও তুলে নেওয়া হল!
জুনিয়র ডাক্তাররা নবান্নের বৈঠক থেকে ফিরে এসে সোমবার রাতেই তাদের ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় বসেছিলেন তারা, এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও ‘ভুখ হরতাল’ চলছিল। তাদের ১০ দফা দাবি নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিলেন তারা। সোমবার ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে অনশন প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা, এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও অনশন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, নবান্ন-বৈঠকে প্রশাসনের ‘শরীরী ভাষা’ তাদের পছন্দ হয়নি। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মায়ের অনুরোধে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। মঙ্গলবারের সর্বাত্মক ধর্মঘটও সোমবার তুলে নেওয়া হয়। অনশন মঞ্চ থেকে সোমবার রাতে প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয়, যেখানে নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা এবং মা উপস্থিত ছিলেন। জুনিয়র ডাক্তার রুমেলিকা কুমার বলেন, “কোনও সরকারি অনুরোধে নয়, নির্যাতিতার বাবা-মার এবং সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই অনশন তুলে নিয়েছি আমরা।”
জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার সোমবার রাতে ‘আমরণ অনশন’ প্রত্যাহারের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই আন্দোলন করছি, সাধারণ মানুষের কথা আমরাই ভাবছি, আমরাই ভাবব। তাই অনশন প্রত্যাহার করলাম। আগামিদিনের কর্মসূচি হিসেবে আগামী শনিবার মহাসমাবেশ ডাকছি, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে সেটা হবে।”
৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’-এ বসেছিলেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। পরের দিন, ৬ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অলোক বর্মা। সোমবার রাতে অর্ণব মুখোপাধ্যায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্র বলতে যা বুঝি, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা দুঃখজনক জিনিস দেখতে পেলাম। বৈঠকে মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানদের প্রতিনিধিদের চুপ করিয়ে দেওয়া হল। স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কী ভাবে খর্ব করা হল তা দেখতে পেলাম।” এর পর তিনি জানান, নির্যাতিতার জন্য সুবিচারের দাবিতে প্রয়োজনে আবার ‘আমরণ অনশন’-এ বসবেন।
১০ অক্টোবর অনশনকারী অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১১ অক্টোবর আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার অনশনে যোগ দেন, যারা হলেন ভিআইএমএস (শিশু মঙ্গল) হাসপাতালের পরিচয় পণ্ডা এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আলোলিকা ঘড়ুই। ১২ অক্টোবর ধর্মতলায় অনুষ্টুপ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেই দিনই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অলোক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে সেখানেই ভর্তি করা হয়। ১৩ অক্টোবর ধর্মতলায় পুলস্ত্য অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। ১৪ অক্টোবর তনয়া অসুস্থ হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। সেই দিনই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনে বসেন সন্দীপ মণ্ডল। ১৫ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনকারী সৌভিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিনই ধর্মতলায় অনশনে বসেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থের রুমেলিকা কুমার এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্পন্দন চৌধুরী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৬ অক্টোবর অলোক ছুটি পান। ১৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের হাসপাতাল থেকে সৌভিক ছুটি পান। ১৯ অক্টোবর কলকাতার নীলরতন হাসপাতাল থেকে পুলস্ত্য ছুটি পান।
গত শনিবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ইমেলের মাধ্যমে জানান যে, সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত আছে। বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ‘শর্ত’ হিসেবে অনশন বাতিল করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দেন যে তারা অনশন বাতিল করবেন না।
সোমবার নির্ধারিত সময়ের আগেই ১৭ জন জুনিয়র ডাক্তার নবান্নে পৌঁছান। দুই ঘণ্টা আট মিনিট ধরে বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে অনশনমঞ্চে ফিরে এসে জুনিয়র ডাক্তাররা অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান, তবে তারা জানান যে এটি সরকারের অনুরোধে নয়, বরং নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অনুরোধে অনশন তুলেছেন।