বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ‘সাদা’ করতে কী কী কৌশল অবলম্বন করতেন পার্থরা! সেই তথ্যও জানাল ইডি (ED)!
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে রাশি রাশি নগদ টাকা উদ্ধার করেছিল ইডি। কীভাবে ওই বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ‘সাদা’ করা হত, কী কী কৌশল অবলম্বন করতেন পার্থরা, এ বার সেই তথ্যও জানাল তারা।
লাখ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বুক করতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কিন্তু কোনও ফ্ল্যাটই পুরোপুরি কিনতেন না। নিয়োগ মামলার চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে ইডি। তাদের বক্তব্য, অগ্রিম দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং করে সম্পত্তির পরিমাণ করতেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং দুর্নীতির টাকাও তার মাধ্যমে সাদা করতেন।
নিয়োগ মামলার পঞ্চম অতিরিক্ত চার্জশিট সম্প্রতি আদালতে জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয়স্থা। কীভাবে কোনস্থার মাধ্যমে আরিক তছরুপ হয়েছে, সেই চার্জশিটে তা উল্লেখ করা হয়েছে। পার্থর জামাই কলময় এই চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে চিহিত। তবে তিনি এখন বিদেশে। তাঁকে একাধিকবারেরা ইড জানতে পেরেছে, সময়ে পার্থ বিভিন্ন লোকজনকেদ টাকা দিতেন। সেই টাকাই আবার ফিরে আস তাঁর স্ত্রীর নামে তৈরি ট্রাস্টে। এভাবে বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দুর্নীতির অন্যতমতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল। নিয়োগ মামলার চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে ইডি। তারা জানিয়েছে, পার্থর জামাই কল্যময়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্যয়া গিয়েছে। নিয়োগ মামলায় পার্থদের ট্রাস্টের ডোনেশন রহস্য ইডির কাছে ফাঁস করেছেন পার্থর জামাই।
বাবলি চ্যাটার্জি মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলো পার্থের কন্যা সোহিনী চট্টোপাধ্যায়। তবে চার্জশিটে তাঁকে অভিযুক্ত করেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা । জামাই কল্যাণময় এখন বিদেশে।
এই অতিরিক্ত চার্জশিটে কেন্দ্রীয় সংস্থা আরও বলেছে, একাধিক সংস্থার মাধ্যমে পার্থ ‘আর্থিক তছরুপ’ করেছেন। কী, কোন কৌশলে টাকা বিনিয়োগ করতেন তিনি, তার বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ইডির চার্জশিটে। ফ্ল্যাট বুকিংয়ের মাধ্যমে টাকা বিনিয় পার্থের অন্যতম কৌশল ছিল, দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এইক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
ইডি জানিয়েছে, বহু নির্মাণ সংস্থাকে অগ্রিম দিয়েেছিলেন পার্থ। কলকাতা এবংরতলির একাধিক ফ্ল্যাট বুক করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও ফ্ল্যাটের জন্যই পুরো টাকা দেননি। অর্থাৎ, একটি ফ্ল্যাটও কিনে ফেলনি।্ল্যাট সংক্রান্ত লেনদেনের জন্য পার্থ দু’টি সংস্থার মালিকানা গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে ইডি। ইমপ্রোলাইন কনস্ট্রাকশন্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং এইচআরআই ওয়েলথিয়েশন রিয়েলটর্স প্রাইভ লিমিটেডের মাধ্যমেই যাবতীয় ফ্ল্যাট বুকিং করতেন তিনি। কোথাও পাঁচ লক্ষ টাকা, কোথাও ১৪ লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই নির্মাতারা জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটের বাকি অর্থ তাঁরা আর পাননি।
ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাজীব জানিয়েছেন সুরঞ্জিতা এইচআরআই ওয়েলথ ক্রিয়েশন রিয়েলটর্স প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক হয়েছিলেন। ইমপ্রোলাইন কনস্ট্রাকশনস প্রাইভেট লিমিটেড মালিকানা গ্রহণের পর এই সংস্থার পরিচালক করা হয়েছিল সুরঞ্জিতা এবং পার্থের স্ত্রী বাবলি চোপাধ্যায়কে। পরে বাবলির মৃত্যুর পর এই সংস্থারও অন্যতম পরিচালক হন রাজীব। পরে পার্থের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য এবং আত্মীয় কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারীকে এই সংস্থাগুলির পরিচালক করা হয়েছিল। পার্থের নির্দেশেই তাঁরা কাজ করতেন। ইডি জানিয়েছে, এই দুই সংস্থা একাধিক ফ্ল্যাটের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়েছিল। কিন্তু একটি ফ্ল্যাটও কেনেনি। এখনও তাদের খাতায় লক্ষ লক্ষ টাকা বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যে ইমপ্রোলাইনের জমি এবং টাকা বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি।
নিয়োগ মামলায় গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলবন্দি পার্থ। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৫০ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা।