অভিষেক ব্যানার্জীর উস্কানিতে খুন হয়েছে বিজেপির কর্মীর মা!বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যেকার লড়াই। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে গত বিধানসভা নির্বাচনে দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ ছিল তীব্র। নীলবাড়ির ফলাফল ঘোষণার দিনেও উত্তেজনা ছিল চরমে। এখন, দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম ফের আলোচনার মধ্যমণি হয়ে উঠেছে। ২৫ মে তমলুক কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে, যার অন্তর্গত নন্দীগ্রাম। ভোটের মাত্র তিন দিন আগে, এক বিজেপি মহিলা কর্মীর মৃত্যু ঘিরে রাজ্যের রাজনীতি ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে।
বুধবার রাতে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া মনসাবাজার এলাকায় দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় আড়ির মা রথীবালা আড়ি। সঞ্জয় নন্দীগ্রামে বিজেপির তফসিলি মোর্চার সম্পাদক। দুষ্কৃতী হামলায় তিনিও জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দলীয় সূত্রে খবর, রথীবালাও বিজেপির একজন কর্মী ছিলেন। এই ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তুলে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সোনাচূড়ায় বিক্ষোভ দেখান। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে, গোটা দিন জুড়ে অবরোধ-বিক্ষোভ চলে। এই দৃশ্য অনেককে জমি আন্দোলনের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
খবর পাওয়া মাত্রই দুপুরে নন্দীগ্রামে পৌঁছান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক হলেন শুভেন্দু, যিনি নীলবাড়ির লড়াইয়ে মমতাকে পরাজিত করেছিলেন। এক দলীয় কর্মীর হত্যার জন্য তিনি তৃণমূলের দিকে অভিযোগ নির্দেশ করেছেন। শুভেন্দুর অভিযোগ, যারা হত্যা করেছে, পুলিশ তাদের সাথে বৈঠক করেছে। তিনি বলেন, “হত্যাকারীরা থানায় এসেছিল। যারা মাকে হত্যা করেছে, তারা রথীবালা আড়ি সঞ্জয় আড়ির মা নন, তিনি আমার মা। হত্যাকারীদের সাথে পুলিশ এখনই মিটিং করেছে। আমি জানতে চাই, হত্যাকারীর সাথে মিটিং করা হল কেন? আইসিকে দেখিয়ে দেব!” পরবর্তীতে, নন্দীগ্রাম থানায় গিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে এফআইআর দায়ের করেন। থানায় যাওয়ার পথে, তিনি এলাকায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শাসন করতেও দেখা গেছে।
তৃণমূল নিশ্চিত করেছে যে এই ঘটনার সাথে তাদের কোনো যোগ নেই। স্থানীয় নেতা শেখ সুফিয়ান বলেছেন, বিজেপির ভেতরে পুরানো এবং নতুনের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের শিকার হয়েছেন রথীবালা। সুফিয়ান ঘটনার দায় শুভেন্দুর উপর চাপিয়েছেন। তার দাবি, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী জানেন যে নন্দীগ্রামে তিনি পরাজিত হবেন, তাই তাকে একটি শেষ চেষ্টা করতে হবে। মনসাবাজারে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে তৃণমূলের কোনো পতাকা নেই। তবে সেখানে আমাদের কিছু সমর্থক আছেন। বিজেপি রাত ১২টার পর গিয়ে আমাদের সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর করে এবং মারধর করে। এই ঘটনার জেরে পুরানো এবং নতুন বিজেপির মধ্যে সংঘাত, মারামারি এবং বিবাদ হয়েছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। আমি কোনো মৃত্যু সমর্থন করি না এবং প্রশাসনকে এর বিচার করার আহ্বান জানাই।’’
বৃহস্পতিবার সকালে সোনাচূড়া এলাকা ছিল থমথমে। সেখানে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। নিহতের বাড়িতে বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় ছিল ঘন। রথীবালার বৌমা সুবর্ণা আড়ি সংবাদমাধ্যমের লোকজনকে বুধবার রাতের ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, রাত প্রায় দুটো নাগাদ তাঁর ভাসুর বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎ ফোন পেয়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাইরে তখন চিৎকার ও চেঁচামেচি চলছিল। খবর ছড়িয়ে পড়ে যে কিছু দুষ্কৃতী বাজার এলাকায় জমা হয়েছে। বিপদ অনুভব করে তাঁর শাশুড়ি ভাসুরের পিছু পিছু যান। সেখানে গন্ডগোলের মধ্যে তিনি তাঁর ছেলেকে খুঁজছিলেন। সেই সময় মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে তাঁর শাশুড়িকে খুন করা হয়।
এই ঘটনার পরে, এলাকায় কিছু তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ও দোকানে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির সাথে দেখা করতে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এলাকায় গিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক, এবং সৌমেন মহাপাত্র। সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হয়। রাজীব বলেন, “আমরা এলাকার তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বার্তা দিতে চেয়েছি যে, তাঁরা যেন কোনও প্রকার ঝামেলায় না জড়ান। তাঁদের উপর হামলা হলেও, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কেউ যেন আইন নিজের হাতে না নেন, সেই বার্তাই আমরা দিয়েছি।”
বিজেপির দাবি অনুযায়ী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিমূলক বক্তব্যের ফলেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।