আরজি করে অপর্ণা সেনকে ‘চটিচাটা’ বলায় সিপিএম কর্মীদের দুষলেন তৃণমূলের পৃষ্ঠপোষক বাম নেতা মহঃ সেলিম!
যখন নাগরিক প্রতিবাদ আরজি কর-কাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো হচ্ছে, তখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দলের কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্কীর্ণতা ত্যাগ করে মাঠ প্রশস্ত করার আহ্বান জানান। শুক্রবার রাজ্য দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে আরজি কর আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, অরিজিৎ সিংহ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নাম করে তিনি বলেন, এঁদের কটাক্ষ করা চলবে না। বরং তাঁদের মতামতকে স্বাগত জানানো উচিত।
উল্লেখ্য যে, আরজি কর হাসপাতালের সামনে গত ১১ অগস্ট থেকে সিপিএমের ছাত্র, যুব এবং মহিলা সংগঠনের ধর্না শুরু হয়েছিল। ১৩ অগস্ট বিকেলে, শ্যামবাজার মোড় থেকে আরজি কর পর্যন্ত মিছিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন কিছু বিদ্বান। অপর্ণা সেন সেই মিছিলের আহ্বানের অন্যতম স্বাক্ষরকারী ছিলেন। ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে’ তিনি মিছিলে না হেঁটে সরাসরি আরজি করে গিয়েছিলেন। পৌঁছনো মাত্রই, হাসপাতালের বাইরে সিপিএমের গণসংগঠনের জমায়েত থেকে ‘চটিচাটা বুদ্ধিজীবীরা দূর হটো’ স্লোগান উঠেছিল। অনেকে মনে করেন, সেলিম ঠারেঠোরে তাঁদের উদ্দেশেই এই বার্তা দিয়েছেন। সেলিম বলেছেন, ‘বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের কাছে আহ্বান জানাব, কে আগে কিছু কেন বলেননি, কেন এখন বলছেন, এই সব প্রশ্ন না তোলাই ভালো। অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, সৃজিত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অরিজিৎ সিংহ গান বাঁধছেন। এই সব কিছুকে শুধু স্বাগত জানানো নয়, কুর্নিশ জানাতে হবে।’
অপর্ণা নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সিপিএম এবং তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের একজন তীব্র বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতো অনেক বিদ্বান সেই সময়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে অপর্ণা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ অবস্থান নেননি; বরং তিনি মমতা সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন। সিপিএমের এক রাজ্য কমিটি সদস্য বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা অপর্ণাদের দূরে সরিয়ে রাখি, তা হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।’’
সিপিএম সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত ২৩ অগস্ট দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে অপর্ণাদের উদ্দেশ্যে ‘চটিচাটা’ স্লোগান নিয়ে আলোচনা হয়। সিপিএমের এক তরুণ নেতা বলেন, “পার্টির বোঝাপড়া স্পষ্ট। আরজি কর-কাণ্ডে সার্বিকভাবে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিসর ছোট না করে আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট না বুঝে অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করছেন, যা এই মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত।”
যদিও এর বিপরীত যুক্তি আছে। দলের এক যুবনেতা বলেন, “নন্দীগ্রামে আমাদের নেতার শহিদবেদির সামনে দাঁড়িয়ে অপর্ণারা যা বলেছিলেন, তা সবার মনে আছে। এত সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।” যদিও সেলিম স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন যে, এখন সেসব ভাবার সময় নয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, “নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় অনেক বামমনস্ক মানুষ এবং বামফ্রন্টের বাইরের অনেক বাম দলকে তৃণমূল নিজেদের করে নিয়েছিল। মানুষের ক্ষোভকে একত্রিত করেছিল। রাজনীতিতে কৌশল একটি বড় বিষয়, তার সাথে সময় এবং পরিস্থিতিও বড় বিষয়।”