দলের নির্দেশেই পার্থর নামে টাকা তোলা হয়েছিলো !পদ হারিয়ে বিস্ফোরক কুনাল ঘোষ!
পদ হারানোর পর কুনাল ঘোষ আরও বেশি বিস্ফোরক হয়ে উঠেছেন! তৃণমূলের ‘অপসারিত’ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, “রাজ্যে চাকরি বিক্রি হচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে বা তাঁর নাম করে টাকা তোলা হচ্ছে, এই খবর দলের কাছে আগে থেকেই ছিল। এমনকি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও দল চাকরি বিক্রির কথা জানত।”
বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) কুণাল ঘোষকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত করেছে। এরপর, একটি বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুণাল জানান, রাজ্যে চাকরি বিক্রি এবং নিয়োগে দুর্নীতি চলছে, যা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগে থেকেই জানত। এই কারণে ২০২১ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষামন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করা হয়নি, যার প্রতি পার্থ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কুণাল আরও ফাঁস করেন যে, পার্থ একা নন, আরও অনেক নেতা চাকরি বিক্রির সাথে জড়িত এবং তারা এখনও দলে বহাল আছেন।
সাক্ষাৎকারে কুণাল বলেন, “চাকরি বিক্রির মাধ্যমে কেউ অন্যায় করেছে, এবং সেই ব্যক্তি এখনও মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। দলের মধ্যেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। যিনি চাকরি বিক্রির সাথে জড়িত তিনি এখনও রাজ্যের মন্ত্রী।” তিনি আরও দাবি করেন, নিয়োগ দুর্নীতির ফলে পরিস্থিতি এখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা আগে ছিল না। SSC’র সদিচ্ছা থাকলে সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল। কিন্তু তা না করে কেউ কেউ নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ‘অপসারিত’ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমি বিকাশ ভট্টাচার্য এবং বিজেপির সমালোচনা করছি। তারা নিজেদের রাজনীতি করছে, যেমন আমিও করছি। কিন্তু আমরা কেন এই রাজনীতি এবং পরিস্থিতি হতে দিচ্ছি?”
সম্প্রতি তৃণমূল কুণাল ঘোষকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত করেছে। বুধবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে শাসক দল এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা করে, এবং এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণগুলিও জানিয়েছে।
বুধবার বিকেলে তৃণমূলের প্রকাশিত বিবৃতিতে দলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের স্বাক্ষর রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সম্প্রতি কুণাল ঘোষ যেসব কথা বলেছেন, সেগুলি দলের নীতির সাথে মেলে না। তাই স্পষ্ট করে দেওয়া জরুরি ছিল যে, তাঁর বক্তব্য পুরোপুরি ব্যক্তিগত মতামত। দলের চিন্তাভাবনা ও তাঁর মতামতের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।” এছাড়াও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগেই কুণালকে দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এবং এবার তাঁকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে।
বুধবার সকালে, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা এবং বর্তমান বিজেপির উত্তর কলকাতার প্রার্থী তাপস রায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কুণাল তাঁর প্রশংসা করেন। কিছু দিন আগে, কুণালের করা একটি পোস্ট নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, যা অনেকে মনে করেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবের দিকে ইঙ্গিত করছিল। এই দুই ঘটনা পর পর ঘটায়, তৃণমূলের বিবৃতিতে কুণালের বিরুদ্ধে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তৃণমূলের ঘোষণা অনুসারে, এখন থেকে কেবল দলের মুখ্য কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিগুলিকেই দলের অফিসিয়াল মতামত হিসেবে গণ্য করা হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলিকে অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তারা কুণালের মন্তব্যগুলিকে দলের মতামত হিসেবে না ধরে। এই বিষয়ে যদি অমান্য করা হয়, তৃণমূল আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
কুণাল ঘোষ নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বড় বিস্ফোরণের পরেও স্পষ্ট করেছেন যে তিনি দল ছাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। তিনি বলেছেন, “আমি তৃণমূলের একজন সৈনিক, মমতা দিদি আমার নেত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি নেতা হিসেবে মানি এবং ভালোবাসি। আমি দলের সৈনিক হিসেবে থাকব এবং দল যদি শেষ সুতোটা ছেড়ে দেয়, তবুও আমি থাকব।”