রাতেই SSKM হাসপাতাল থেকে কাকুকে তুলে নিয়ে গেলো ED! রাতের ঘুম উড়ে গেলো কাকুর সাহেবের !
‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে এসএসকেএম (SSKM)হাসপাতাল থেকে বার করা হলো প্রায় পাঁচ মাস পর। অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে জোকা ইএসআই(ESI) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কণ্ঠ স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে। গত ১৭ জুলাই থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।
বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিংহ রুদ্ধদ্বার শুনানি করেন। এই মামলায় মঙ্গলবারই বিচারপতি ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে তলব করেছিলেন। রুদ্ধদ্বার শুনানিতে তাঁরা ছিলেন। প্রাথমিক মামলার যে রিপোর্ট ইডি আদালতে জমা দিয়েছে, সেখানে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস এবং তার সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও ছিল। ওই সংস্থাতেই কাজ করতেন‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।বিচারপতি অমৃতা সিনহার আজকের এই রুদ্ধদ্বার শুনানিতে সেই সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এরপরেই বুধবার রাতে হঠাৎই এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের সামনে এসে পৌঁছয় ইএসআই(ESI) হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। হাসপাতালের সামনে মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইডি আধিকারিকেরাও এসএসকেএম (SSKM) এ পৌঁছান এবং SSKM হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই আন্দাজ করা গিয়েছিল,‘কালীঘাটের কাকু’কে এসএসকেএম থেকে বার করা হতে পারে।
রাতে দেখা যায়, এসএসকেএমের হৃদ্রোগ বিভাগের কেবিন থেকে বার করা হয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। খয়েরি রঙের চাদর মুড়ি দিয়ে ছিলেন ‘কাকু’, মুখে রয়েছে মাস্ক। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে বার করে তোলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। বেরোনোর সময়ে ‘কাকু’ কোনও কথা বলেননি। ইডি সূত্রে খবর, রাতেই তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইএসআই হাসপাতালেও অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বার করে হুইলচেয়ারে তোলা হয় ‘কাকু’কে।
‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চায় ইডি। নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে যা গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টার পরেও ‘কাকু’র স্বরের নমুনা মেলেনি। এমনকি, আদালতের নির্দেশের পরেও সংগ্রহ করা যায়নি নমুনা।
ওই নমুনা সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইডি। নিয়োগ মামলার তারাই সুজয়কে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুজয়কে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, ‘কাকু’কে আড়াল করছে এসএসকেএম। ইচ্ছা করেই তাঁর স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রতিবার এসএসকেএমে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ইডিকে। এসএসকেএম (SSKM)হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’কে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো হবে। তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে কি না, তা-ও জোকা ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দল ঠিক করবে বলে জানিয়েছিল আদালত। এর পরেই এক দিন ইএসআইতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘কাকু’র কেবিনের সামনে পৌঁছে গিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু সে দিনও তাঁকে হাসপাতাল থেকে বার করা যায়নি।অদৃশ্য চাপে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, আগের দিন রাত থেকে সুজয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁকে রাখতে হয়েছে আইসিসিইউতে। সে দিন প্রায় ছ’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ফিরে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ED কে।
কিন্তু আজ ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে তলব করে বিচারপতি অমৃতা সিনহার কড়া নির্দেশের পর ED রাতেই ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে SSKM হাসপাতাল থেকে তুলে ESI হাসপাতালে নিয়ে গেলো কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষার জন্য।