অভিষেকের ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’(Leaps&Bounds) সংস্থার সাড়ে ৭ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু করলো ইডি(ED )!
প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত মামলায় আসলো চাঞ্চল্যকর মোড়। মঙ্গলবার আদালতে ইডি(ED) জানিয়ে দিল, এই দুর্নীতির সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ থাকা সংস্থা ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’(Leaps&Bounds) সংস্থার অধীনে থাকা আটটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আজ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে ইডি জানিয়েছে ওই সম্পত্তির মূল্য সাড়ে সাত কোটি টাকা। প্রসঙ্গত,‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’(Leaps&Bounds) সংস্থার সিইও পদে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেফতার করে ইডি(ED)।
উল্লেখ্য অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত মামলায় ইডিকে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে বলেছিলেন বিচারপতি সিনহা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার ডিরেক্টর নথি জমা দিয়েছেন বলে জানাতেই বিচারপতি জানতে চান, ২০১৪ সালের পর থেকে কিভাবে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অভিষেকের। তাঁর আয়ের উৎসটা কী?
জবাবে ইডি আদালতকে বলেছিল, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির সিইও ৫,৫০০ পাতার নথি জমা দিয়েছেন। তারা তা খতিয়ে দেখছে। রুজিরাকেও সেকশন ৫০ অনুযায়ী ইডি তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে। ইডির আইনজীবী বলেন, যে পরিমাণ নথি এসেছে, তা থেকে স্পষ্ট করে বলা যেতে পারে ,কোনও কিছুই গোপন না করে তদন্তের আরও অগ্রগতি করবে ED ।
এ কথা শুনেই বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন,যে পরিমাণ নথি জমা পড়েছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির। ওই নথি অনুযায়ী যে সম্পত্তি কেনা বা লেনদেন হয়েছে, তা কি খুঁজে দেখেছেন আপনারা? আয়ের উৎস খুঁজে দেখেছেন? আইন আপনাদের ক্ষমতা দিয়েছে,এটাই তো আপনাদের তদন্তের মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।
উলেখ্য , অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য অনেক আগেই ইডিকে বিশদে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা । লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ছ’জন ডিরেক্টরের নাম, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ, সংস্থার লেনদেন, তার মূল্য, এই সংস্থায় কারা ক্লায়েন্ট, তাঁদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, রোজ সংস্থার কাজ কে দেখতেন, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, তাঁর মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, সংস্থার সব কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কারা, কবে সংস্থায় যোগ দিয়েছেন, কেন সংস্থার ঠিকানা পরিবর্তন এবং ওই সংস্থার কার কাছে তদন্ত নিয়ে ইডি সাহায্য চায়,এ সকল তথ্য জানাতে বলা হয়েছিল হাইকোর্টে।
এ সকল বিষয়ে অভিষকের কাছে নথি চাওয়া হলে কিছু দিন আগেই ইডিকে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সকল তথ্য জমা দিয়ে এসেছিলেন অভিষেক। ৫৫০০ পাতার নথি ছিল তাতে। অবশেষে বৃহস্পতিবার ইডি সেই নথি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দিল আদালতে।ওই রিপোর্ট জমা পড়ার পর বিচারপতি সিংহ জানান, আদালত ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেবে। তার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে জানায় ইডি। তারা যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপরে নজরদারি চালাচ্ছে এবং লেনদেন বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে, তা জানায় ইডি।
প্রসঙ্গত, এই মামলার তদন্ত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করতে বলেছিল আদালত। সেই সময়সীমা পার হয়ে গেলেও ইডি মঙ্গলবার আদালতে জানিয়েছে, অনেক তথ্য হাতে এসে যাওয়ায় এখনও তদন্ত শেষ করা যায়নি। আদালতের কাছে আরও কিছুটা সময় চান ইডি(ED) র আইনজীবী। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি অমৃতা সিনহা আগামীকাল বুধবারেই ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টরকে আদালতে হাজিরা দিতে বলেছেন।
এদিকে এই মামলাতেই অন্য দাবি করেছে সিবিআই(CBI)। নিয়োগ দুর্নীতিতে কারা এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন, তার একটি তালিকাও আদালতে পেশ করেছে সিবিআই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামটি হল তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তী। এ ছাড়াও মহিদুল আনসারি, জাফিকুল ইসলাম, সজল কর, বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত এবং সৌরভ ঘোষের নাম রয়েছে,যারা প্রত্যক্ষভাবে অভিষেক ব্যানার্জীর সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত।