কলকাতায় ইসকনের রথে গোলযোগ,৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ভেঙে গেলো জগন্নাথ দেবের রথ!
এই বছর কলকাতার ইসকনের রথযাত্রা তার ৫৩ বছর পূর্ণ করল। এই ৫২ বছরের ইতিহাসে এমন কোনও দিন ঘটেনি যে রথকে ক্রেন দিয়ে টেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু এবার ঘটনাচক্র একটু ভিন্ন হয়ে গেল।
কলকাতার বুকে ইসকনের রথযাত্রা এক অনন্য সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এই উৎসবে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে থাকে। এই বছরের রথযাত্রা অনুষ্ঠানে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রথকে ক্রেনের সাহায্যে টেনে নিতে হয়েছে।
রথযাত্রা হল এক প্রাচীন হিন্দু উৎসব, যা প্রধানত জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাত্রাকে উদযাপন করে। ইসকন কলকাতার রথযাত্রা বিশেষ করে বিখ্যাত, কারণ এটি পুরীর বাইরে সবচেয়ে বড় রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত। এই উৎসবে ভক্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অসাধারণ মিশ্রণ দেখা যায়। ভক্তরা রথের রশিতে টান দিয়ে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে তাদের মাসির বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ইসকনের রথযাত্রার উদ্বোধন করেন রথের রশিতে টান দিয়ে। কিন্তু ভক্তরা প্রভু জগন্নাথকে তাঁর মাসির বাড়ি পর্যন্ত রথের রশিতে টান দিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। এর বদলে, প্রথমবারের মতো ক্রেনের সাহায্যে জগন্নাথ, বলরাম, ও সুভদ্রাকে ময়দান অঞ্চলের মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার এই অনন্য ঘটনা কলকাতার রথযাত্রায় ঘটেছে। ইসকন কর্তৃপক্ষ বলেন, এটি জগন্নাথের ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে।
কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রার ৫২ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি , এমনটাই জানাচ্ছেন ইসকনের মুখপাত্রেরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রথযাত্রার সূচনা করে যাওয়ার পরেই নামে তুমুল বৃষ্টি। কিছু ক্ষণের জন্য স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় রথযাত্রা। বৃষ্টি শেষ হতেই , রথযাত্রার উদ্যোগ শুরু হলে ঘটে যায় বিপত্তি। দেখা যায়, জগন্নাথ দেবের রথ নন্দীঘোষের স্টিয়ারিং ভেঙে গিয়েছে। বহু চেষ্টার পরেও ভাঙা স্টিয়ারিং দিয়ে রথ চালানো সম্ভব না হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়।
ইসকন কর্তৃপক্ষ এবং কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে ক্রেন আনা হয়েছিল। সেই ক্রেন দিয়েই হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে এক্সাইড মোড় হয়ে প্রথমেই জগন্নাথের রথ পার্ক স্ট্রিটের মাসির বাড়ির মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছে যায়। রথযাত্রার প্রথা অনুসারে, বলরাম এবং সুভদ্রা আগেই মাসির বাড়িতে পৌঁছে যান। সবার শেষে পৌঁছান প্রভু জগন্নাথ। তবে এবারের ইসকনের রথযাত্রায় এই প্রথায় পরিবর্তন এসেছে। বলরামের তালধ্বজ এবং সুভদ্রার দর্পদলনের আগেই নন্দীঘোষ মাসির বাড়িতে পৌঁছে যায়। এই প্রথা পরিবর্তনের বিষয়ে ইসকন কলকাতার একজন প্রধান কর্তা রাধারমণ দাস বলেন, ‘‘প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছায় সব কিছু ঘটে বলে আমরা মনে করি। তাই এবারের রথযাত্রা ক্রেন দিয়ে সম্পন্ন হওয়া এবং জগন্নাথের আগে মাসির বাড়িতে পৌঁছানো সবই তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী হয়েছে বলে আমরা গ্রহণ করছি।’’
প্রথমে হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে শরৎ বোস রোড, হাজরা মোড়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রোড হয়ে এক্সাইড মোড় দিয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে রথযাত্রা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ক্রেনের মাধ্যমে রথ পরিবহনের কারণে পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়। এখন হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে এক্সাইড মোড় হয়ে রথযাত্রা পার্ক স্ট্রিটের অস্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে নেওয়া হচ্ছে। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা এই কয়েক দিন মাসির বাড়িতে থাকবেন। ১৬ জুলাই উল্টোরথে, পার্ক স্ট্রিট থেকে তিন দেবমূর্তি ইসকন মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে। ইসকনের তরফে জানানো হয়েছে, তার আগে জগন্নাথের রথের স্টিয়ারিং সারানো হবে।
এই বছরের ঘটনা অবশ্যই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে যে কেন এমন হলো। তবে এটি স্মরণ করা জরুরি যে, প্রতিটি উৎসবের সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ জড়িত থাকে, এবং এই ঘটনা হয়তো আমাদের উৎসবের আয়োজনে আরও সতর্ক এবং নিরাপদ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করে। এটি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে আরও মজবুত করার এক সুযোগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
সব মিলিয়ে, ইসকনের রথযাত্রা কলকাতার সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারের এক অপরিহার্য অংশ এবং এই ঘটনা সত্ত্বেও, ভক্তদের আস্থা এবং উৎসবের প্রতি উৎসাহ অটুট থাকবে। আমরা আশা করি যে ভবিষ্যতের উৎসবগুলো আরও সুন্দর এবং নির্বিঘ্ন হবে।