সরকার গঠন না করে ঝোপ বুঝে কোপ মারার ‘রণকৌশল’ নিতে চলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।
তাড়াহুড়ো নয়, অপেক্ষা করা উচিত। বর্তমানে সঠিক সময়ের প্রতীক্ষা করা হচ্ছে। সঠিক সময় এবং সুযোগ বুঝে কৌশলগত আক্রমণের পরিকল্পনা করছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’।
লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফল সত্ত্বেও, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কাছে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এই কারণে, জোটটি আপাতত একতাবদ্ধ বিরোধী হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জোটের বৈঠক শেষে, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর পাশে ছিলেন সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, এনসিপির প্রধান শরদ পওয়ার, শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত, সিপিএমের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, এবং আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ সহ জোটের অন্যান্য দলের নেতারা।
এই নির্বাচনে বিজেপি একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ৪০০-র গণ্ডি তো বহুদূর, এনডিএও ৩০০-র গণ্ডি পার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাদের কাছে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা আছে। এনডিএ-র বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে তারা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে সরকার গঠনের দাবি জানাবে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রত্যাশিত মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর সমর্থনে নরেন্দ্র মোদী পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। যদি সব ঠিক থাকে, তিনি শনিবারে শপথ নিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে, ইন্ডিয়া দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘ইন্ডিয়া’র কাছে ২৩৩টি আসন রয়েছে, কিন্তু সরকার গঠনের জন্য ২৭২টি আসনের প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুকে সমর্থনে আনার চেষ্টা করবে কিনা ‘ইন্ডিয়া’, তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতির আলোচনা চলছে। অনেকে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের দিকে নজর রেখেছিলেন। বৈঠক শেষে, খড়্গে সাংবাদিকদের বলেন যে ‘ইন্ডিয়া’ মোদীর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে এবং জোটের সব শরিক মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হবে। খড়্গে আরও বলেন, “সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অনেকের মতে, সরাসরি না বললেও খড়্গের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, এখনই সরকার গঠনের জন্য ঝাঁপানো অর্থহীন। বরং, সরকার গঠনের দাবি করলে ‘ক্ষমতার লোভ’ বলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করতে পারেন মোদী ও অমিত শাহ। এতে ‘ইন্ডিয়া’র ভাবমূর্তিতে দাগ লাগতে পারে। তাই এখন সঠিক সময়ের অপেক্ষাই জোটের রণনীতি। বৈঠকের পর জোট শরিক আইইউএমএল-এর নেতা পিকে কুনহালিকুট্টি বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় স্বস্তিতে নেই বিজেপি। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।” শিবসেনার নেতা সঞ্জয় বলেন, “জনগণ এই সরকার বদলে ফেলতে চায়। সঠিক সময়েই সেই লক্ষ্য পূরণ হবে।”