জমি জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতার হলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
জমি জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতার হলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ইডি (ED) র জি়জ্ঞাসাবাদ পর্বের পর বুধবার সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি (ED)।
হেমন্ত সোরেনকে জমি জালিয়াতি মামলার তদন্তে ইডি (ED) সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর তরফে জানানো হয় , মুখ্যমন্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী চম্পাই সোরেন। ঝাড়খণ্ডকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে বড় ভূমিকা ছিল চম্পাই সোরেনের।
#WATCH | Ranchi: ED Officials leave from Jharkhand CM Hemant Soren's residence pic.twitter.com/YZw3mi00NO
— ANI (@ANI) January 31, 2024
জমি জালিয়াতি মামলায় নাম জড়িয়েছিলো হেমন্তের। সেই নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য গত কয়েক দিন ধরেই খুঁজছিল ইডি (ED)। এর মধ্যেই রবিবার রাত থেকে হঠাৎ বিজেপির তরফে দাবি করা হয়,হেমন্ত সোরেন নিখোঁজ হয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য দিল্লির ঝাড়খণ্ড ভবনেও খোঁজ করা হয়। সেখানেও ছিলেন না তিনি। ইডি (ED) হেমন্তের ফাঁকা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি বিএমডব্লিউ(BMW) গাড়ি ও নগদ ৩৬ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পরে রাঁচিতে নিজের বাড়ির সামনেই দেখা যায় হেমন্ত সোরেনকে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে বসেই নিজের দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM)-র বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বুধবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের বাড়িতে পৌঁছয় ইডি (ED)।
হেমন্তের গ্রেফতারি নিয়ে পথে নামে ঝাড়খণ্ডের শাসকদল জেএমএম। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সমর্থকেরা।আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আর্জি জানায় ইডি (ED)। ঝাড়খণ্ড প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যে বিশৃঙ্খলার আন্দাজ করে ঝাড়খণ্ডের অর্থ দফতরের সচিব এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। রাঁচিতে হেমন্তের বাড়ির চার পাশে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারাও।
প্রসঙ্গত রাঁচিতে ভারতীয় সেনার একটি জমি কাগজপত্র জাল করে কেনাবেচা হয়েছে বলে দাবি করে গত বছর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাঁচি পুরসভার ট্যাক্স কালেক্টর দিলীপ শর্মা। তাঁর অভিযোগ ছিল প্রদীপ বাগচী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে ইডি। তদন্তে নেমে ইডি (ED) জানতে পারে, যে জমি নিয়ে বিতর্ক, সেই একাংশের (মোটামুটি ৪.৫ একর) মালিক বিএম লক্ষ্মণ রাও। যিনি স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাকে ওই জমি দান করেছিলেন।
ইডি (ED) সূত্রে খবর, তদন্তে একটি বড় চক্রের হদিস মেলে। সেই চক্রে জমির দালালদের পাশাপাশি বেশ কয়েক জন সরকারি আধিকারিক এর নাম উঠে আসে। তাঁরাই নথিপত্র জাল করে প্রদীপ বাগচীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই জমির মালিক বানিয়েছিলেন। পরে সেই জমি বেচে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের একটি চা বাগানের মালিকের কাছে। জমি-মামলায় পরে গ্রেফতার হন প্রদীপ বাগচী। তদন্তকারীরা জানতে পারে, ভারতীয় সেনার সেই জমির দাম সব মিলিয়ে ২০ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু তা বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৭কোটি টাকায়। তার মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা সরাসরি নগদ নিয়েছিলেন প্রদীপ বাগচী। বাকি টাকার লেনদেন হয়েছিল ব্যাংকের চেকে। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ, নথিপত্র জাল করার কাজেও বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছিল।আর এই জালিয়াতির পেছনে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পরোক্ষ হাত ছিলো বলে প্রমাণ পেয়েছে ইডি (ED) । সে সব অভিযোগের প্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।