জ্ঞানবাপী মসজিদের অন্দরে শুরু পূজা অর্চনা।জ্ঞানবাপী মসজিদ এখন জ্ঞানবাপী মন্দির !
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘সিল’ করা একটি তহখানায় হিন্দু ভক্তদের পূজার্চনার জন্য বুধবার অনুমতি দিয়েছিল বারাণসীর জেলা আদালত। জেলা বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেসের সেই নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার বিকেলেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়ে গেল আরতি এবং পুজোপাঠ। সেই পুজোর ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল।
বারাণসী জেলা আদালতের রায়ের পরই জ্ঞানবাপী মসজিদের অন্দরে শুরু হল পুজো। বুধবার মধ্যরাত থেকে জ্ঞানবাপীর ব্যস তয়খানা অর্থাৎ বেসমেন্ট থেকে ভেসে এল শঙ্খধ্বনি-ঘণ্টাধ্বনির শব্দ। এবার থেকে পাঁচদফা পুজো হবে তালাবন্ধ সেই বেসমেন্টে।
আদালতের নির্দেশ ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যারিকেড সরিয়ে ‘ব্যাস কা তহখানা’-কে পুজোর জন্য প্রস্তুত করে দিতে হবে। তার পরেই শুরু হয় প্রশাসনিক তৎপরতা। সূত্রের খবর, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সাধারণ ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষ। আরতি এবং পুজোপাঠের সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিত বৃহস্পতিবার জ্ঞানবাপীর অন্দরে পুজার্চনা করেন। বারাণসী জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এবার থেকে দৈনিক পাঁচ দরা পুজো-আরতি হবে জ্ঞানবাপী মসজিদের ব্যস তয়খানাতে। বেসমেন্টের এই অংশে ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ হবে মঙ্গল আরতি, দুপুর ১২টায় ভোগ নিবেদন করা হবে বেসমেন্টে। বিকেল ৪টে নাগাদ হবে অপরাহ্ন আরতি, সন্ধ্যা ৭টা হবে সায়াহ্নকাল আরতি এবং রাত ১০টা নাগাদ হবে শয়ন আরতি।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জ্ঞানবাপী লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিতই আরতি ও পূজার্চনা করেছেন বৃহস্পতিবার। দু’টি তহখানার মধ্যে একটিতেই হিন্দু ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বারাণসী জেলা আদালত। জ্ঞানবাপী মসজিদ লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের বিখ্যাত নন্দীমূর্তির মাত্র ২০ ফুট দূরেই রয়েছে ‘ব্যাস কা তহখানা’। তার লাগোয়া আরও একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষেও দেব-দেবীদের মূর্তি রয়েছে বলে দাবি হিন্দু পক্ষের। যদিও সেখানে পুজোপাঠের অনুমতি দেয়নি বারাণসী জেলা আদালত। এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি পাশের সিল করা ওজুখানায় বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার।
২০২২ সাল থেকে আদালতের নির্দেশে মসজিদের ওজুখানা অংশটি ‘সিল’ করে রাখা হয়েছে। ‘স্বয়ম্ভূ জ্যোতির্লিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বর’ নামে পরিচিত ওই অংশেই প্রাচীন শিবলিঙ্গ মিলেছে বলে হিন্দু পক্ষের দাবি। মসজিদ কমিটির দাবি, সেটি আদতে ফোয়ারা। সোমবারই হিন্দুদের তরফে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে, ওই শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হোক এবং যেখানে সেটি পাওয়া গিয়েছে, সেখানে প্রত্নখননের অনুমতি দেওয়া হোক। মুসলিম পক্ষের পাল্টা দাবি, মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার দাবি, ১৯৯১ সালের ‘ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন’-এর পরিপন্থী।
হিন্দু পক্ষের দাবি, ‘ব্যাস কা তহখানা’ দীর্ঘ দিন ধরে ‘ব্যাস’ পুরোহিত বংশের দখলে ছিল। তাঁরা এক সময় ওখানে বসবাসও করতেন। শৈলেন্দ্রকুমার পাঠক ব্যাস নামে ওই বংশের পুরোহিত আদালতে জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালের গোড়া পর্যন্ত তাঁরা ওখানে পুজো করেছেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে উত্তেজনা ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিংহ যাদবের সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন পুরোহিত ছিলেন সোমনাথ ব্যাস। শৈলেন্দ্র সোমনাথের উত্তরাধিকারী হিসাবে আবার পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। জেলাশাসককে ওই তহখানার রিসিভার হিসাবে নিয়োগ করার আবেদনও করেন। জ্ঞানবাপীতে পুজো করার অনুমতি চেয়ে স্থানীয় পাঁচ হিন্দু মহিলার তরফেও আদালতে পৃথক আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মামলার সূত্রেই জ্ঞানবাপীতে এএসআই সমীক্ষা এবং আরতি-পূজার্চনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সূত্রের খবর, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে সাধারণ হিন্দু ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই তয়খানা। সেখানে পুজো করার অধিকার পাবেন সকলেই। যদিও এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অফিসিয়াল বিবৃতি জারি করা হয়নি।