মিথ্যে বলেছেন মমতা ব্যানার্জী! ডিভিসি জল ছাড়বে জেনে আটটি জেলাকে ‘সতর্ক’ করে নবান্ন, প্রকাশ্যে এল চিঠি!
বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টির পর থেকে রাজ্য সরকার দাবি করে আসছে যে, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) বিনা নোটিশে প্রচুর জল ছেড়ে বাংলাকে বন্যাকবলিত করেছে। এই অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দুইটি চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রত্যুত্তরে, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক দাবি করেছে যে, রাজ্য ও ডিভিসির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটিই সিদ্ধান্ত নেয় কখন ও কত জল ছাড়া হবে। ডিভিসি জানিয়েছে, ‘দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি’ (ডিভিআরআরসি) যার মধ্যে ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের (সিডব্লিউসি) সদস্য রয়েছেন, তারা এই বিষয়ে অবগত ছিলেন।
ডিভিসি জানিয়েছে যে সকলেই জল ছাড়ার বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিলেন, যা রাজ্য সরকার অস্বীকার করেছে। কিন্তু রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের একটি ‘মেমো’ অনুসারে, রাজ্য সরকার জল ছাড়ার বিষয়ে পূর্ব জ্ঞাত ছিল। মমতা ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম চিঠি লেখেন। তিন দিন আগে, ১৭ সেপ্টেম্বর, নবান্ন আটটি জেলাকে সতর্ক করেছিল যে বন্যা পরিস্থিতি ঘটতে পারে। মেমোতে বলা হয়েছে, ওই দিন হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, এবং পুরুলিয়ার জেলাশাসকদের কাছে মেমো পাঠানো হয়েছিল। মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ডিভিআরআরসি এবং সিডব্লিউসি জানিয়েছে যে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর বাড়ছে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ডিভিআরআরসি আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়বে। মেমোতে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং প্লাবিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মেমোতে উল্লেখ ছিল যে, কংসাবতী বাঁধ থেকে জল ছাড়া হতে পারে। এমন ঘটলে পূর্ব মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কংসাবতী বাঁধ এবং ডিভিসি জল ছাড়লে হলদি ও রূপনারায়ণ নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাবে। এই সতর্কতা প্রেরণের পরেও রাজ্য সরকার ডিভিসির কোনো খবর না জানানোর দাবি করছে কেন? মঙ্গলবার এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “ডিভিসি রাজ্যকে জানিয়েছিল কিনা তা আমি জানি না। তবে যে কোনো সতর্কতা জারি হলে আমরা প্রস্তুতি নিতে বলি। শুধু সেই সময়েই নয়, মে মাস থেকেই আমাদের দফতর বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।”
এক ডিভিসি কর্তা বলেন, “প্রয়োজনে জল ছাড়া অবশ্যম্ভাবী। এই সিদ্ধান্ত কমিটি নেয়। চেয়ারম্যান ও মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা কিছু পরিবর্তন আনতে পারে না। এটাও সত্যি যে, সেই সময় রাজ্যের সমস্ত বাঁধ থেকে অনেক জল ছাড়া হয়েছিল।” তিনি দাবি করেন, কংসাবতীর মুকুটমণিপুর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলেই ঘাটাল বানভাসি হয়েছে। তাঁর মতে, বিতর্কের জেরে রাজ্যের আধিকারিকেরা কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়াটা সঠিক নয়। উল্লেখ্য, ডিভিসি বোর্ড থেকে রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব শান্তনু বসু ইস্তফা দিয়েছেন। শান্তনুর মতামত জানার জন্য মঙ্গলবার তাঁর সাথে বারবার ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিলো , কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি এবং মোবাইলে পাঠানো বার্তার কোনো উত্তর দেননি।
সম্প্রতি বন্যাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ‘ম্যান মেড’ বলে দাবি করে ডিভিসিকে দোষারোপ করার পর, বিজেপির রাজ্য নেতারা পাল্টা সরব হন। তারা অভিযোগ করেন যে, ‘অসত্য’ প্রচার করা হচ্ছে। ডিভিসির পাশাপাশি, রাজ্যের অধীনে থাকা বাঁধ ও জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এটিকে ম্যান মেড বন্যা বলেছেন। আমরা বলছি, এটা উওম্যান মেড বন্যা। রাজ্যের জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা বিপদসীমা পার হওয়ার আগেই জল ছাড়া হয়েছে। আরজি কর-কাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্যই এই অপচেষ্টা এবং বাংলার মানুষের দুর্ভোগ।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বীরভূমের বোলপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসির বিরুদ্ধে বন্যার ইস্যুতে আক্রমণ করেন। জগন্নাথ সেই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বীরভূমে ময়ূরাক্ষীর জলে বন্যা হয়েছে, যা ম্যাসাঞ্জোর বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলে।” প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী ১০টি জেলায় বন্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “কিন্তু ডিভিসি একা জল ছাড়লে তা কখনও সম্ভব নয়।”