অন্তর্ঘাতের আশঙ্কায় দলের মধ্যে চোরাস্রোত আটকাতে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের সাথে জরুরি বৈঠকে ফিরহাদ!
লোকসভা নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের শঙ্কা নিয়ে কলকাতার মেয়র তৃণমূলের কাউন্সিলরদের সাথে মিটিং করেছেন। শুক্রবার একটি হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ফিরহাদ হাকিম কাউন্সিলরদের ভোটের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করেন। তিনি দলের মধ্যে কোনো চোরাস্রোত মেনে নেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন।
গত বুধবার উত্তর কলকাতার এক রক্তদান শিবিরে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় এবং উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের উপস্থিতির পরপরই তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ আসেন। তাপসের প্রশংসায় কুণালের বক্তৃতা প্রকাশ্যে আসার পর, তাকে দলের মুখপাত্র এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অপসারিত করা হয়। এই ঘটনায় কুণাল মিডিয়ায় তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপর, মেয়র তৃণমূল কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠক করে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
উত্তর কলকাতা লোকসভার ভোটের বিষয়ে বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “তাপস রায়ের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকতে পারে, যখন তিনি দলে ছিলেন তখন সব ঠিক ছিল। এখন তিনি দলের বাইরে, অনুষ্ঠানে গেলে সৌজন্য দেখানো যাবে, কিন্তু ভোটের ময়দানে তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, কোনও ছাড় নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “তাপস রায় এখন আমাদের দলগত শত্রু, ব্যক্তিগত স্তরের সৌজন্য অন্য জায়গায়। তিনি এখন অন্য দলে, তাই রাজনৈতিক শত্রুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবেই লড়াই করতে হবে, কোনও কম্প্রোমাইজ নয়। উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের প্রার্থী হলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতাদি তাঁকে প্রার্থী করেছেন, কাউন্সিলরদের উচিত তাঁকেই জয়ী করা। সুদীপদা জয়ী হলে মমতাদির হাত শক্ত হবে, ব্যক্তিগত সমস্যা সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য লড়াই করতে হবে।”
ফিরহাদের মন্তব্য নিয়ে কলকাতার রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা হল, তাপসের প্রতি তৃণমূলের উদ্বেগ স্বাভাবিক। তাপসের পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবন উত্তর কলকাতায় কাটানোর কারণেই এমনটা। ২০১১ সালে তাঁকে বরাহনগরের বিধায়ক করা হলেও, উত্তর কলকাতার সাথে তাঁর সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তাপস উত্তর কলকাতা থেকেই বিধায়ক এবং কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ২০২১ সালে তৃণমূল তৃতীয়বার সরকার গঠন করার পর, তাপসকে মন্ত্রিসভায় না নিয়ে উত্তর কলকাতা জেলার সভাপতি করা হয়। তিনি আট মাস ধরে দলের সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাপসের জনভিত্তি এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে তাঁর দলত্যাগের ঘটনায় সহানুভূতি রয়েছে। তিনি উত্তর কলকাতা বিজেপির প্রার্থী হিসেবে সব স্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে মিশতে পারেন। বিজেপিতে যোগদানের পর তিনি স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও কুমন্তব্য করেননি। এই সম্পর্কের সমীকরণের কারণেই তাপসকে অনেকে ভোট দিতে পারেন, এমনটাই উত্তর কলকাতা তৃণমূলের একাংশের নেতৃত্বের আশঙ্কা।
সম্প্রতি কুণাল ঘোষ জেলা সভাপতি হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনেন, তার যুক্তিসঙ্গত দিক খুঁজে পাচ্ছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূলের কিছু নেতা। কারণ উত্তর কলকাতায় এখনও তৃণমূলের কোনও অফিস বা জেলা কমিটি নেই। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই যুক্তি যাতে ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব না ফেলে, সেই লক্ষ্যে কাউন্সিলরদের সতর্ক করতে দ্রুত একটি বৈঠক ডেকেছেন।