ভারতের শত্রু দেশের মদতে TMC নেতা আমিন সোহেলের উস্কানিতে বন্ধ হল DRDO র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ!
প্রতিবাদ প্রথম থেকেই ছিল। এখন,তৃণমূল নেতার উস্কানিতে স্থানীয়দের বাধা দেওয়ার ফলে জুনপুটের DRDO র ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ১০ জুলাই থেকে কাজ বন্ধ আছে বলে খবর ।
পশ্চিমবঙ্গের জুনপুটে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এর প্রস্তাবিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ স্থানীয় মৎস্যজীবীদের বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে।অভিযোগ উঠেছে, ১০ জুলাই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ করতে বলেন। এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায় এবং পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং প্রতিবাদের সুর লক্ষ করা গেছে। প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসা মৎস্যজীবীরা এবং অন্যান্য সংগঠনের দাবি, এই প্রকল্প তাদের জীবিকা এবং পরিবেশের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে।
প্রতিবাদের মূলে রয়েছে মৎস্যজীবীদের চিন্তা যে প্রকল্পের ফলে তাদের মাছ ধরার এলাকা সীমিত হয়ে যাবে এবং সমুদ্রের প্রাণীদের উপর বিপর্যয় ঘটবে। এছাড়াও, প্রকল্পের কারণে সম্ভাব্য পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবাদের ফলে, প্রকল্পের কাজ গত ১০ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে।
এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসা তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতা আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এর ফলে ঠিকাদারের লোকজন এলাকা ছেড়ে চলে যান এবং লঞ্চিং প্যাড ঘেরার কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।
বাম আমলে পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সেই সময়ে বিরোধী দল তৃণমূলের প্রতিরোধ ছিল। হরিপুর থেকে কাছের জুনপুটে অবস্থিত ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের কাজ বন্ধের পেছনেও বর্তমান শাসক দল তৃণমূলের ভূমিকা ছিল।
বুধবার থেকে ডিআরডিও-র বিমান মহড়া (ফ্লাইট ট্রায়াল) শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য প্রথম দফায় ১৯ জুলাই পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২৪-২৬ জুলাই পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। জুনপুটের লঞ্চিং প্যাডের চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা হয়েছিল, এবং কলকাতার এক ঠিকাদার সংস্থা সেখানে কাজ করছিল। উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের দক্ষিণ দিকেও ঘেরাটোপ তৈরি হয়েছে। এরপর সমস্যা শুরু হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ১০ জুলাই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের নেতৃত্বে মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ করতে বলেন। ঠিকাদারের লোকজন এলাকা ত্যাগ করেন। তারপর থেকে সেখানে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। জেলা পুলিশের এক সূত্র অনুযায়ী, ডিআরডিও প্রথমে লঞ্চিং প্যাডের কাছে কিছু কাজ করার কথা জানালেও পরে কাজ বন্ধ রাখার কথা জানায়। কাজ বন্ধের কারণ প্রকাশ করা হয়নি। কাঁথি ১-এর বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, “ডিআরডিও মৌখিকভাবে জানিয়েছে যে, তারা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখছে।”
জুনপুট মৎস্যখটির সভাপতি শেখ নজু এবং সহকারী সম্পাদক জাহেদ আলি দাবি করেছেন যে, মৎস্যজীবীরা ঠিকাদার সংস্থার সাথে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু সমস্যা এখনও মিটেনি। তৃণমূল নেতা আমিন বলেন, “কিছু মৎস্যজীবী সংগঠন, পরিবেশপ্রেমী এবং বিজ্ঞান কর্মীরা অরাজনৈতিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের সমস্যা তুলে ধরে আন্দোলন করছেন এবং কাজ বন্ধের অভিযোগ অসত্য।”
কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, “ডিআরডিও-র প্রকল্পের জন্য রাজ্য জমি দিয়েছে, তবুও বাধা দেওয়া হচ্ছে, এর তদন্ত হওয়া উচিত। ডিআরডিও দেশের সুরক্ষার জন্য কাজ করে এবং আমি এনআইএ তদন্ত চাই।” আমিন পাল্টা প্রশ্ন করেন, “২০০৬ সালে হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলনে দেশের প্রতিরক্ষা বিঘ্নিত হয়নি, তাই না?” তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ প্রশ্ন করেন, “এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রক কি রাজ্যের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং জেলা প্রশাসনকে বাধার কথা জানিয়েছে?”কুনাল ঘোষ হয়তো না বুঝে কথা গুলো বলেছেন !এখানে বলে রাখা প্রয়োজন জুনপুটে DRDO র ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষার জন্য যে জমি তা দিয়েছিলো এই রাজ্য সরকার।
আগামী মার্চে জুনপুট থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা রয়েছে। বছরে দুই থেকে তিন বার এই উৎক্ষেপণ হবে, এবং নির্দিষ্ট দিনগুলিতে মৎস্যজীবীদের এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। এর জন্য জেলা প্রশাসন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
বিমান মহড়ার জন্য বুধবার থেকে মৎস্যজীবীদের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু জুনপুটের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে গিয়েছেন। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণবকুমার কর দাবি করেন, “মহড়া বাতিল হয়েছে।” অন্যদিকে, দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল জানান, মৎস্য দফতর ছয় দিন সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে এবং এই নির্দেশ প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়নি।
সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুমনকুমার সাহা বলেন, “ডিআরডিও নির্দেশিকা প্রত্যাহারের কথা জানায়নি। ৩ জুলাইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৭-১৯ এবং ২৪-২৬ জুলাই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’