দিলীপ ঘোষের ‘খেলা ঘোরাতে’ কি নয়া পরিকল্পনা আরএসএসের (RSS)!
আরএসএস (RSS) মেদিনীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী করে দিলীপ ঘোষকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে দেখতে চায়। বাংলার আদি বিজেপি সংঘের এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। সূত্রের মাধ্যমে এমন খবর পাওয়া গেছে।
জুন মালিয়া সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে মেদিনীপুর বিধানসভা আসন থেকে শীঘ্রই ইস্তফা দেবেন। এর ফলে, রাজ্যের অন্যান্য ১০টি বিধানসভা ক্ষেত্রের সাথে মেদিনীপুরের শূন্য আসনেও আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আরএসএসের পশ্চিমবঙ্গ শাখা চাইছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপকে প্রার্থী করে জিতিয়ে বিরোধী দলনেতা করতে। দিলীপের জীবনশৈলী আজও তাঁর ছেলেবেলার আরএসএস কর্মীদের মতোই রয়ে গেছে। অন্য দলের নেতারাও তাঁকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পছন্দ করেন। তাই বাংলায় দলের ইমেজ ফেরাতে আরএসএসের প্রথম পছন্দ হলেন দিলীপ ঘোষ। ২০১৬ সালে খড়গপুর বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় পা রাখার পর পরিষদীয় রাজনীতিতে তিনি যথেষ্ট ছাপ রেখেছেন।
বাংলায় প্রাথমিক বিজেপির এক বড় অংশ আরএসএস থেকে সরাসরি গেরুয়া রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। এই কারণেই প্রাথমিক বিজেপির নেতারা চান উপনির্বাচনের মাধ্যমে দলবদলু শুভেন্দুর পরিবর্তে দিলীপকে বিরোধী দলনেতার দায়িত্বে আনতে। এই প্রস্তাব বুধবার দিল্লিতে জানানো হয়েছে। আরএসএস সূত্রে খবর, শুভেন্দু এবার রাজ্যের ৩৪টি আসনে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পদ্ম প্রতীক দিয়েছিলেন, যার মধ্যে মাত্র সাতজন জয়ী হয়েছেন। প্রাথমিক বিজেপি কর্মীদের মতে, বাংলায় দলের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হল বিরোধী দলনেতার পরামর্শ অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বঙ্গ-বিরোধী সিদ্ধান্তগুলি। এই সিদ্ধান্তগুলি তৃণমূলকে চাপে ফেলার চেয়ে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি আমজনতার কাছে আরও প্রকট করে তুলেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভে বিজেপি বাংলায় উড়ে গিয়েছে।
দিল্লিতে এনডিএ জোটের সরকার গঠনের পরেই বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে সাংগঠনিক পরিবর্তন শুরু করবে। এই পরিস্থিতিতে, মমতা-ম্যাজিকে বিধ্বস্ত বঙ্গ বিজেপির সভাপতি এবং বিরোধী দলনেতা পদেও পরিবর্তন আনতে আরএসএস উদ্যোগী হয়েছে। শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর, অমিত শাহের আশীর্বাদে তিনি ক্ষমতাশালী হয়ে দিলীপ ঘোষের মতো প্রাথমিক বিজেপি নেতাদের প্রভাব কমিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বাংলায় ২০১৯ ও ২০২১ সালে বিজেপি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সেরা ফলাফল করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর, শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাব অনুযায়ী দিলীপকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি করা হয়। এরপর থেকে রাজ্যের সব উপনির্বাচন ও লোকসভা ভোটে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সুকান্ত-শুভেন্দুর প্রস্তাব মেনে দিলীপকে মেদিনীপুর লোকসভা থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করা হয়েছিল, যেখানে তিনি হেরে গিয়েছেন। দিলীপকে প্রার্থী করার পর থেকে প্রাথমিক বিজেপি শিবিরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, এবং তার পরাজয়ের পর আরএসএস ও প্রাথমিক বিজেপি শিবিরে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। উভয় শিবিরই চাইছে যে কোনো মূল্যে দিলীপ ঘোষকে বিরোধী দলনেতা পদে ফিরিয়ে আনা হোক।