‘ছাত্র সমাজ’ আয়োজিত মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতনের শিকারের বিচারের দাবিতে বিজেপি বুধবারে ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছে। এই বন্ধ মূলত রাজ্য সরকার ও শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ডাকা হয়েছে। বাংলার বাম-কংগ্রেস কি এই বন্ধকে সমর্থন করবে? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তাদের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছেন, কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সিদ্ধান্তটি জনগণের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
সেলিম জানিয়েছেন যে তিনি বিজেপির আহ্বান করা বন্ধকে কোনওভাবেই সমর্থন করছেন না। তাঁর মতে, “বিজেপির আহ্বান করা বন্ধকে সমর্থন করা উচিত নয়। বুধবার কলকাতায় আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। বামপন্থী গণসংগঠন আদিবাসী অধিকার মঞ্চ এবং নার্সরা মিছিলে অংশ নেবে। এছাড়াও রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। আমরা সেই কর্মসূচিতে যোগ দেব।” মঙ্গলবারের ‘ছাত্র সমাজ’ আন্দোলনকে তিনি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেন, “এই ছাত্র সমাজ আসলে কারা? এটি পুরোপুরি বিজেপি ও আরএসএসের কাজ। যখন জনগণ আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চাইছে, তখন বিষয়টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার সহায়তা করছে। তারা চাইছে যে আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবি ঢাকা পড়ে যাক এবং দ্বিমেরু রাজনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক।”
অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর সরাসরি বন্ধের বিরোধিতা করেননি। তাঁর মতে, “আমরা বন্ধ ডাকিনি। যারা ডেকেছে তারা জানে, এবং মানুষ জানে। বন্ধ হবে কিনা তা মানুষের উপর নির্ভর করছে।”
কিছু বাম সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় উল্লেখ করেছেন যে, আন্দোলনের শুরু থেকে দলের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব অগ্রভাগে থাকলেও মঙ্গলবার প্রচারের আলো পদ্মশিবির কেড়ে নিয়েছে। বুধবারেও তারাই প্রচারে থাকবে। এক যুব নেতার মতে, “মঙ্গলবারের আন্দোলনে যদি পরিচিত ছাত্র নেতা-নেত্রীদের নামানো যেত, তাহলে বিজেপি এই সুযোগ পেত না।” তবে সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা মনে করেন এই ধরনের কথা অমূলক। দল আন্দোলনের সঙ্গে অন্যভাবে যুক্ত থাকার পরিকল্পনা করেছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “একদিকে নাগরিক আন্দোলন চলছে, অন্যদিকে দলগত আন্দোলনও। পরিস্থিতি স্পর্শকাতর। ছদ্মবেশে এই কাজ করলে দীর্ঘমেয়াদে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না, যা দল চায় না।”
প্রসঙ্গত, আসন্ন ৩রা সেপ্টেম্বর কলকাতায় এক বৃহৎ মিছিলের আয়োজন করেছে বামফ্রন্ট। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এই মিছিলে ফ্রন্টের বাইরের অন্যান্য বাম দলগুলিকেও অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এছাড়াও, কংগ্রেসকে এই মিছিলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা।