বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জয়শঙ্কর, ডোভালের সঙ্গে বৈঠক অমিত শাহের, সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা!
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্র অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকদের অবস্থা এবং ভারতের সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সর্বদল বৈঠক করেছেন জয়শঙ্কর, যেখানে সংসদের সব দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন যে, হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে আছেন এবং তিনি জরুরি ভিত্তিতে ভারতে অস্থায়ী আশ্রয় চেয়েছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হাসিনা কে ভারত সরকার কিছু সময় দিয়েছে, এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা ভারতে জানানো হবে।
জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তিনি সংসদে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছেন। জয়শঙ্করের বক্তব্যের প্রধান ৯টি পয়েন্ট হলঃ
১। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এর ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতেও প্রভাব ফেলেছে।
২। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। গভীর বিভাজন ও মেরুকরণ দেখা দেয়। এই বছরের জুনে শুরু হওয়া একটি ছাত্র আন্দোলন এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। হিংসা বাড়তে থাকে এবং জুলাই মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। সেই সময় ভারত বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ রাখে, আলোচনা করে এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে।
৩। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও বিক্ষোভ কমেনি। এরপর নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যায়। এরপরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
৪। ৪ অগাস্ট বাংলাদেশের ঘটনাবলী গুরুতর মোড় নেয়। হিংসা বাড়তে থাকে এবং সারা দেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে আগুন দেওয়া হয়।
৫। ৫ অগাস্ট কার্ফু সত্ত্বেও ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। এরপর ভারত সরকারের খবর অনুযায়ী, সেনা বাহিনীর সাথে বৈঠকের পর হাসিনা দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং পদত্যাগ করেন। তিনি খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে ভারতে আসার জন্য অনুমোদন চান এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ থেকে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের অনুরোধ পান। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান।
৬। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও পরিবর্তনশীল। সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান গত ৫ অগাস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে সেনার শাসন বহাল থাকবে।
৭। আমরা আমাদের কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের সাথে নিবিড় এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। সেখানে প্রায় ১৯,০০০ ভারতীয় নাগরিক আছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৯,০০০ জন ছাত্র। হাইকমিশনের পরামর্শে জুলাই মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভারতে ফিরে গেছে। আমাদের কূটনৈতিক উপস্থিতির আলোকে, ঢাকায় হাইকমিশনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা এবং সিলেটে আমাদের সহকারী হাইকমিশনগুলো রয়েছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করবে। আমরা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছি।
৮। আমরা সংখ্যালঘুদের অবস্থানের প্রতি নজর রাখছি। তাদের সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংস্থার উদ্যোগ রয়েছে। আমরা এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুনঃস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকব। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এই জটিল পরিস্থিতিতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৯। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ঢাকার কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি এমনই রয়েছে। আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে সংবেদনশীল বিষয়াবলীর ব্যাপারে সংসদের বোঝাপড়া এবং সমর্থন চাইছি, যেখানে সবসময় জাতীয় ঐক্যমত বজায় রয়েছে।