জয়ন্তের ‘এত বড় বাড়ি’? জানতই না মদন-সৌগত ! দায়িত্ব এড়িয়ে ‘ভুল সংশোধন’ করার ঘোষণা সৌগত-মদনের !
দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় সোমবার দাবি করেছেন যে, কামারহাটিতে মা ও পুত্রকে মারধরে অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংহ যে এত বড় বাড়ি করেছেন, তা তাঁরা জানতেন না। কামারহাটির মারধরকাণ্ডের পর জয়ন্তের তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছিল। সৌগত এবং এলাকার বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে জয়ন্তের ছবি প্রকাশ্যে আসার পর, সৌগত সাংবাদিকদের সামনে সেই দায় ঝেড়ে ফেলেন। তিনি মেনে নিয়েছেন যে ভুল হয়েছে এবং তা সংশোধন করা হবে। কোনও প্রোমোটারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা যাবে না বলেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, দলের নেতা-কর্মীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সৌগত।
জয়ন্তকে কামারহাটিতে প্রকাশ্যে মা এবং পুত্রকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশ জয়ন্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেও আঙুল উঠেছে, অভিযোগ করা হয়েছে যে শাসকদলের একাংশের প্রশ্রয়েই জয়ন্তের রমরমা। সাধারণ দুধ ব্যবসায়ী থেকে ক্রমে তিনি এলাকার ‘ডন’ হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। বিশাল সাদা অট্টালিকা তৈরি করার বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার কামারহাটি পুরসভায় বিধায়ক মদন এবং পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার সঙ্গে বৈঠকে বসেন সৌগত। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে সৌগত জানান, জয়ন্তের এমন অট্টালিকা রয়েছে, তা তৃণমূলের কেউ জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘গোপাল বলেছেন, কিন্তু আমরা জানতাম না যে, জয়ন্ত সিংহ এত বড় বাড়ি করেছেন। কেউ না বললে জানব কী করে? সংবাদমাধ্যমও আগে জানায়নি।’’
সাংসদ সৌগত রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে তিনি জয়ন্তের বাড়বাড়ন্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে পূর্বে জয়ন্ত বুম্বাকে মারধর করার পর উত্তরবঙ্গ থেকে গ্রেফতার হয়েছিল এবং দেড় মাস হেফাজতে ছিল। সৌগত অভিযোগ করেন যে পুলিশ যথেষ্ট কঠিন ধারা প্রয়োগ না করায় জয়ন্ত ছাড়া পেয়েছিল। তিনি পুলিশকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জয়ন্তের বিরুদ্ধে কঠিন ধারা প্রয়োগের দাবি করেছেন। জয়ন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন এবং অতীতে ভুল হয়েছে মেনে নিয়ে তা সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে দলের ক্ষতি হয় এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না এবং নির্দেশ না মানলে শোকজ ও বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আড়িয়াদহের তালতলার ক্লাবে মারধরের একটি ভিডিও প্রকাশ করে বিজেপি অভিযোগ করেছিল যে, মদনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে জয়ন্তের। সেই ভিডিওতে চ্যাংদোলা করে একজনকে মারধর করতে দেখা গিয়েছিল এবং তাতে জয়ন্তের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। জয়ন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ অস্বীকার করে মদন পাল্টা আঙুল তুলেছিলেন সৌগত এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের দিকে। মদন দাবি করেছিলেন, পুলিশকে বারবার বলার পরেও তারা সৌগতকে জানাতে বলেছিল। সৌগত তখন এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি। যদিও গোটা ঘটনায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে রাজ্যের পুলিশ। দলের একাংশ মনে করছিল, এভাবে পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলছেন মদন। এবার দলের নেতা-কর্মীদের মন্তব্য করা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন সৌগত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীরা কোথাও বিবৃতি দেবেন না। নীতিগতভাবে মনে করি, দলের কারও বিরুদ্ধে কোনও নেতা-কর্মীর প্রকাশ্যে মুখ খোলা উচিত নয়। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পার্টিতে কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলবে না।’’ মদনও যে এই নিয়ম মেনে চলছেন, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মদন নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর মুখ খুলবেন না।’’ মদনও তাতে সায় দিয়ে বলেছেন, ‘‘পার্টির সিদ্ধান্ত, সৌগতদা ছাড়া কেউ কথা বলবেন না। সেখানে আমার কথা বলা শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল।’’ তবে সৌগতের অনুপস্থিতিতে কোনও ভাল বিষয়ে অবশ্যই কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।