পেরিয়ে গিয়েছে গোটা একটা দিন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টা থেকে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে টানা তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই (CBI)। মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বর্তমানে সেখানে হাজির রয়েছে সিবিআই এর মোট ছ’টি দল। সূত্রের খবর,বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও এ বার পাওয়া গেল নথি। তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির পাশের জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে নথিবোঝাই ব্যাগ। ওই নথিগুলি কিসের, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)-র আধিকারিকেরা। এমনটাই জানা গিয়েছে সিবিআই সূত্রে। ওই সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের নথি ছাড়াও এসএলএসটির গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ডেটাবেসই মিলেছে জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে। তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ প্রার্থীর তথ্য।
এদিকে সিঁদুরের কৌটোর মধ্যে মোবাইলের মেমোরি কার্ড লুকিয়ে রেখেছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। আর সেই মেমোরি কার্ডে কয়েছে নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক তথ্য।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণের বড়ঞার বাড়িতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। তল্লাশি চালানো হয় বিধায়কের অফিস-সহ একাধিক জায়গায়। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। তার পর থেকেই মোবাইল দু’টির খোঁজ চলছে। পাশাপাশি খোঁজ চালানো হচ্ছে দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কেরও। বিগত সাড়ে ২২ঘণ্টা ধরে সেই খোঁজও চলছে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মোবাইলের খোঁজে পুকুরের জল ছেঁচে তুলে দেওয়া হয়েছিল রাতেই। কিন্তু রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো না থাকায় মোবাইল খোঁজার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। শনিবারের আলো ফুটতেই কাদা ঘেঁটে আবার শুরু হয় তল্লাশি। মোবাইল খুঁজে বার করতে আনা হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর। তল্লাশিতে যোগ দিয়েছেন আরও এক দল সিবিআই আধিকারিক।
পাশাপাশি শনিবার সকাল থেকে জীবনকৃষ্ণের দুই আত্মীয়ের বাড়িতেও নতুন করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। পুলিশের যে ভ্যান দু’টি শুক্রবার রাতে চলে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি শনিবার সকালে আবার তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির বাইরে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির সামনে আরও কড়া হয়েছে নিরাপত্তা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সকাল থেকে মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য পুলিশ।
সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের প্রাক্তন যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্থানীয় এক এজেন্ট কৌশিকের নাম সামনে আসে। এরপরেই শুরু হয় খোঁজখবর। সিবিআই সূত্রে খবর, সেই এজেন্টের সূত্র ধরেই বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার নাম উঠে এসেছে। সিবিআই সূ্ত্রের দাবি, সকাল থেকে প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের সহযোগিতা করলেও বেলা গড়াতেই তদন্তকারীদের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছেন জীবনকৃষ্ণ সাহা,যখন বুঝতে পারেন আর পালানোর কোনো পথ নেই তখন হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ ।
এদিকে গত বুধবার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এই তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। বিধায়ককে দেখে ‘চোর’ বলে ‘অপবাদ’ দেন সূর্য ঘোষ নামে এক বৃদ্ধ।আমজনতার লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করেছেন বিধায়ক। তিনি একটি আস্ত চোর। বুধবার দুয়ারে সরকার শিবিরে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে দেখে তাঁর মুখের উপর আঙুল উঁচিয়ে এমনই অভিযোগ করলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা। যা শুনে প্রকাশ্যেই মেজাজ হারান বড়ঞার তৃণমূলের এই চোর বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা ।