আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে সে দেশে অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। বিনা নথিতে যারা আমেরিকায় রয়েছেন, তাদের ধরে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছে ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকার পদক্ষেপকে সমর্থন জানাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও। একই সঙ্গে আমেরিকার ভিসা পেতে ভারতীয়দের চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে থাকার বিষয়টিও ট্রাম্প এর নজরে এনেছেন তিনি।
ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সফরকালে চতুর্দেশীয় অক্ষ (কোয়াড)এর মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দুই নেতার সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস থেকে সফর এবং বৈঠকের মূল নির্যাস তুলে ধরেন বিদেশমন্ত্রী। তিনি জানান, ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
‘ব্লবার্গ’-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে চিহ্নিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁদের ভারতে ফেরত পাঠাতে চায় আমেরিকা। পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও জানান, অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করতে নয়া্লির সহযোগিতা নিচ্ছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জয়শঙ্করের। তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের একটি নীতি রয়েছে, যা প্রতিটি দেশের জন্যই প্রযোজ্য । বৈধ অভিবাসনে সব সময় সমর্থন করি। আমরা বিশ্বাস করি বৈশ্বিক কর্মস্থলে ভারতীয়দের প্রতিভা এবং দক্ষতা বিশ্ব সর্বোৎকৃষ্ট সুযোগ পাক। একই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসন যে কোনও ক্ষেত্রেই সমর্থনযোগ্য নয়, তা-ও স্পষ্ট করেছেন জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রী বলেন, “অবৈধ যাতায়াত এবং অভিবাসনের আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। কারণ যখনই কোনও একটি অবৈধ ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে আরও অনেক অবৈধ কার্যকলাপ জুড়ে যায়। যা কোনো দেশের সুনামের দিক থেকে কখনওই ভাল নয়।
তাঁর বক্তব্য, যদি কোনও দেশে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী থাকেন এবং যদি দিল্লি নিশ্চিত হয় তিনি ভারতীয় নাগরিক, তবে তাঁকে ভারতে ফেরানোর জন্য কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত। এটি কেবল আমেরিকার জন্য নয়, সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এর ফলে বৈধ উপায়ে সংশ্লিষ্ট দেশে ভারতীয়দের যাতায়াত আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন বিদেশমন্ত্রী। তবে ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদনে যে ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীর কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না তিনি।শঙ্করের বক্তব্য, বিষয়টি সংবেদনীল। তাই তাঁরা ভারতীয় নাগরিক কি না, সেটি যাচাই করে দেখতে হবে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বৈধ পথে আমেরিকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন জয়শঙ্কর। যাঁরা বৈধ উপায়ে আমেরিকায় যান, তাঁদের ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এটি আমেরিকার প্রশাসনের নজরে আনেন তিনি। পরে ভারতীয় দূতাবাস থেকে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “যদি সাধারণ নাগরিকদের ভিসা পেতে এত দিন সময় লাগে, তবে (দ্বিপাক্ষিক) সম্পর্ক সঠিকভাবে পালিত হয় না। ভিসায় এই দেরির কারণোয়, পর্যটনে প্রভাব পড়ে। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ। (ভিসায় দেরি হলে) তা এই প্রক্রিয়াকে সীমিত করে দেয়।”