রাজ্যে জোরকদমে চলছে SIR-এর প্রস্তুতি। এই পরিস্থিতিতে আজ নির্বাচন কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, যে কোনও মুহূর্তে SIR করতে নির্বাচন কমিশনের কোনও বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে SIR সুষ্ঠুভাবে না হলে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। SIR শুরুর আগেই দুই পক্ষের সংঘাত মনে করিয়ে দিচ্ছে অগাস্ট মাসের কথা, যখন ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগে ৪ জন অফিসার এবং ১ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে সাসপেন্ড করে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছিল দিল্লি পর্যন্ত।
শুভেন্দু বলেছেন, SIR যেকোনো দিন বা মুহূর্তে করতে নির্বাচন কমিশনের সামনে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে SIR সুষ্ঠুভাবে না হলে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতিশাসন চালু হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে ফাইনাল তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এটা কি সম্ভব? স্বয়ং ঈশ্বরও পারবে না। এই মুহূর্তে রাজ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ টিম, যারা গত ৪৮ ঘণ্টায় দফায় দফায় বৈঠক করছে SIR-এর প্রস্তুতি নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কমিশনকে তীব্র আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আবারও সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের রিপোর্টের ভিত্তিতে ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে ২ জন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) এবং ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO)-কে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেয়। কমিশন এই ৪ জনের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করতেও বলে। এছাড়া ময়নার এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধেও FIR দায়েরের নির্দেশ দেয়। তবে এই ঘটনার পর অফিসারদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ২ জন WBCS অফিসারকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হল, যখন নির্বাচন ঘোষণাই হয়নি। কী সাহস! এখন থেকে কী ভেবেছেন? এই NRC-র নামে, পিছনের দরজা দিয়ে যাকে খুশি অফিসারদের ভয় দেখানো যাবে? অফিসারদের পাশে সরকার ছিল, আছে এবং থাকবে। এর ঠিক ৩ দিন পর, ৮ অগাস্ট সময় বেঁধে কড়া চিঠি পাঠিয়ে নবান্নের ওপর চাপ তৈরি করে নির্বাচন কমিশন। ফের মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে কমিশনের সচিব লেখেন, কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এই অফিসারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন এবং ১১ অগাস্ট দুপুর ৩টার মধ্যে নির্দেশ পালন করা হয়েছে, এই রিপোর্ট দিন। এরপরও নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থার কথা বলেছিল, কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে তা নেওয়া হয়নি। এরপর ১২ অগাস্ট মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁকে সরাসরি দিল্লিতে ডেকে পাঠায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
১৩ অগাস্ট দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। অবশেষে ২১ অগাস্ট ৪ জন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হলেও, কোনও FIR দায়ের করা হয়নি। অর্থাৎ ৪ জন সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আংশিকভাবে মানা হয়েছে নবান্নে। তবে ক্যাজুয়াল ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের ক্ষেত্রে FIR ও সাসপেনশনের নির্দেশ পুরোপুরি মানা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আবারও এসআইআর নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে এসআইআর প্রক্রিয়া কতটা নিরপেক্ষভাবে হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বিহারে যেভাবে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছিল, সেটাই সাফল্যের মূল কারণ। তবে BLO-রা প্রাণ হাতে নিয়ে বিহারের মতো সব বুথে SIR কার্যক্রম করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।


