পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যাঘাতমূলক অভিযানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়। মঙ্গলবার সেই প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পূর্ণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কথা বলেন। সেনাকে ধন্যবাদ জানান। প্রস্তাবে অপারেশন সিঁদুরের উল্লেখ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই সঙ্গে, এই রাজ্যে কারা তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তা-ও স্পষ্ট করেন। শুভেন্দুর বক্তব্যের মাঝেই তৃণমূলের ও বিধায়কদের মধ্যে অধিবেশন কক্ষে তুমুল চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। সেই প্রস্তাবে তৃণমূল ও বিজেপির একাধিক বিধায়ক বক্তব্য রাখেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী “বন্দে মাতরম” বলে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন এবং প্রস্তাব আনার জন্য স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। এরপর বিধানভার বিরোধী দলনেতা ভারতীয় সেনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত মাতা যখন ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, তখন আমাদের বীর সেনারা ১০০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে আজহার ছাড়া প্রায় সব জঙ্গিকে নির্মূল করেছে। তিনি বিএসএফ-সহ প্যারা মিলিটারি বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান।
এরপর রাজ্যের শাসকদলের দুই বিধায়ককে কটাক্ষ তিনি বলেন, “বারবার ব্রাত্য বসু শহিদ জওয়ান ঝন্টু এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেছেন। কে নিষেধ করেছে, বলুন তো। এ পি জে আব্দুল কালামকে রাষ্ট্রপতি করেছিল এনডিএ সরকার। আপনাদের নেত্রী সমর্থন করেছিলেন। জাতের ঊর্ধ্বে উঠে নাজমা হেপতুল্লা , আরিফ খানকে রাজ্যপাল করেছেন নরেন্দ্র মোদজি।”
এদিন অধিবেশন কক্ষে বিজেপি বিধায়করা হাতে তাগা পরেছিলেন। সেই তাগা তুলে দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন, “পহেলগাঁওয়ে তাগা দেখে মারা হয়েছে।” তাঁর বক্তৃতার সময় তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের বাড়ি গিয়েছিলেন?” এর উত্তরে শুভেন্দু বলেন, “হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। স্থানীয় বিধায়ক হিসাবে আপনাদের মানিক ভট্টাচার্য এই বিষয়ে জানেন।”
এরাজ্যে কাদের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই, তা স্পষ্ট করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, যারা এখানে থেকে পাকিস্তানের সমর্থনে কথা বলে লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। যারা এখানে জঙ্গি সংগঠন আনাসারুল্লা বাংলার সমর্থন করে, লড়াই তাদের বিরুদ্ধেও। শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের সময় কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক চিৎকার করলে, মুখ্যমন্ত্রীসহ অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম তাঁদের থামতে বলেন। এর জবাবে শুভেন্দু বলেন, “আপনারা থামাতে বলেন, অথচ গেটে গিয়ে আপনারা বেলাগাম মন্তব্য করেন।”
স্পিকারের সেনাকে ধন্যবাদ প্রস্তাবে কেন অপারেশন সিঁদুরের উল্লেখ নেই, সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে শুভেন্দু প্রশ্ন করেন, “প্রস্তাবে সিঁদুর নামটি উল্লেখ করতে আপত্তি কেন? কেন নাম নেই?” শিউলি সাহা জবাব দেন, “সিঁদুর কি সবাই পরে?” এই মন্তব্যের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, “হ্যাঁ, সিঁদুর পরে না মাকুরা। তারা চিনকে সমর্থন করে। যারা ধর্ম মানে না তারা সিঁদুর পরে না।”
একটি পোর্টালে প্রকাশিত ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য উল্লেখ করেন শুভেন্দু। তখন স্পিকার তাঁকে বলেন, “বাইরে কী বলেছেন, তা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। ফিরহাদ তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের বিষয় উল্লেখ করলে ফিরহাদকে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে।” বিরোধী দলনেতা উত্তর দেন, বলতে দিন ওনাকে !
শাসকদলের আরও দুই বিধায়ক, উদয়ন গুহ এবং নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্যও উল্লেখ করেন শুভেন্দু। অধিবেশনের মাঝেই উদয়নের সঙ্গে বিরোধী দলনেতার তর্কাতর্কি শুরু হয়। উদয়নকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান বিজেপি বিধায়করা। দুই পক্ষের উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় সরগরম হয়ে ওঠে অধিবেশন কক্ষ।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানানো প্রস্তাবে বিরোধী দলনেতার জন্য ১৮ মিনিট সময় নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানকে অপমানজনকভাবে আক্রমণ করে, তিনি এই প্রস্তাবে অপারেশন সিঁদুর ও টার্গেট কিলিং-এর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। ভারত মাতা কী জয় এবং বন্দে মাতরম উচ্চারণ করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। তাঁর বক্তব্য শেষে স্পিকার মন্তব্য করেন, “আমাদের উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধা জানানো। কী নাম অন্তর্ভুক্ত হলো কিংবা হলো না, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য নয়।