শীর্ষ আদালতের রায়ের ফলে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী আচমকা চাকরি হারিয়েছেন। যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। তাই চাকরিহারা পক্ষ থেকে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক তালিকা প্রকাশের দাবি জানানো হচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগের সময় ১৫টিরও বেশি কাউন্সেলিং (ইন্টারভিউ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এভাবেই ২০১৬ সালে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হয়। তাঁদের মধ্যে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে ওই ১২টি কাউন্সেলিংয়ে উপস্থিত প্রতিটি কাউন্সেলিং থেকে একজন প্রতিনিধি এসএসসি চেয়ারম্যানের কাছে যাবেন। শেষমেশ মোট ১৩ জন প্রতিনিধি এসএসসি ভবনে বৈঠক করতে যান। তবে বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই এসএসসি ভবনের সামনে উত্তেজনা শুরু হয়। কারণ, ভবনের বাইরে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানতে পারেন যে এসএসসি সর্বোচ্চ তিনটি কাউন্সেলিং পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ করবে। এই নিয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। চাকরিহারা শিক্ষক মেহবুব মণ্ডলের অভিযোগ এভাবে যোগ্য ও অযোগ্যদের একত্রিত করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
একজন চাকরিহারা শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিনিধিরা এসএসসি ভবনের ভিতরে গিয়েছিল। তাদের বলা হয়েছে যে প্রথম থেকে তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের নাম দেওয়া হবে। বাকিদের অযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের যোগ্যতার পার্সেন্টেজ কমানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এটা মেনে নেব না। এটি আমাদের অধিকার। আমরা কষ্ট করে এই চাকরি অর্জন করেছি। নয়তো এখানেই অবস্থান করব।’’ আর এক চাকরিহারা শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘এদের কথা বিশ্বাস করে ভুল করেছি। তবে তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাব না। ইচ্ছাকৃতভাবে তালিকা দেওয়া হচ্ছে না।’’
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন রবিবারই ‘যোগ্য চাকিপ্রার্থীদের নতুন তালিকা ইমেলের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষা দফতরকে পাঠিয়েছিল। তালিকায় সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রার্থীর নাম, স্কুলের নাম-সহ বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। দাবি করা হয়েছিল যেিকায় প্রায় ১৯ হাজার ‘যোগ্য’ চাকরিপ্রার্থ নাম রয়েছে। পরিকল্পনা ছিল্যা ৬টায় ‘যোগ্যদের’ তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে ৭টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তালিকা প্রকাশিত হয়নি।
এসএসসির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃত চাকরিহারা ব্যক্তিরা। সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আপাতত আচার্য সদন ঘেরাও করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
চাকরিচ্যুতদের ২ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় বলেছেন, “যদি আমি যোগ্য না হই, যদি আমাকে অযোগ্য বলে চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়, তবে যতদূর যেতে হয়যাবো । সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করতে দেব না।” তিনি রাজ্য সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে যে তাঁর সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রীর জন্যই আজ যোগ্য প্রার্থীরা এই পরিস্থিতির শিকার। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি টাকা দিতে হবে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কমিশন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কিছুক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।