এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। দুর্নীতিমূলক নিয়োগ হওয়ায় ২০১৬ সালের গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করে ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিযুক্ত প্রত্যেককে অবিলম্বে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতের এই নির্দেশের পরেও চাকরিচ্যুত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই পরামর্শের কথা স্মরণ করিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সরকারের এই অবস্থান আদালত অবমাননার শামিল বলে দাবি করেছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি স্পষ্ট করেছেন, সরকার আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুতদের নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে দিলে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনবেন তিনি।
গত সোমবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের কেউ স্কুলে যেতে বারণ করেনি। তাঁর আবেদন, শিক্ষকরাে যান। যে কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারেন।’ মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেদনে যদিও কর্ণপাত করেননি সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকরিহারারা। মঙ্গলবার স্কুলে যাননি তাঁরা। বুধবার চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে জেলার DI অফিসগুলির ওপর। কলকাতার কসবায় DI অফিসে চাকরিহারাদের ওপর লাঠি চালায় পুলিশ। এমনকি চাকরিহারাদের কয়েকজনকে লাথি মারতে দেখা যায় এক পুলিশকর্মীকে।
- আরও পড়ুন — ”মুখ্যমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স শুনে মনে হচ্ছিল চোরের মায়ের লম্বা গলা।” বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী !
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ পুনরায় মনে করিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বিকাশ ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি পোর্টাল আপডেট করব। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। কোনও স্কুলে কোনও টার্মিনেশন লেটার নেই। কোথাও বেতন বন্ধের কথা আমি অন্তত জানি না।’ এর কিছুক্ষণ পরে নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, ‘সবাইকেই অনুরোধ করা হবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে যে যেভাবে কাজ করছিলেন সেভাবেই কাজ করুন। আমরা মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে পরিষ্কার করতে আবেদন করেছি যাতে বর্তমান ব্যবস্থা চালু থাকতে পারে। আগামী দিনেও এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে বার করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং চালিয়ে যাব।’
রাজ্য সরকারের তরফে এহেন আচরণের জন্য বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আদালত গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করে প্রত্যেককে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।একই সঙ্গে বিকল্প পথ হিসেবে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে ফের পরীক্ষায়ার সুযোগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার আদালতের সেই নির্দেশ না মেনে ঘুরপথে চাকরিচ্যুতদের চাকরি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় তাহলে তা আদালত অবমাননা হবে। আমি মুখ্যমন্ত্রীসহ সকলের বক্তব্য খতিয়ে দেখব। তারপর সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করব।’
বিকাশবাবু বলেন, ‘এই সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রীর আইনের প্রতি কোনও আস্থা নেই। উনি পুরসভায় প্রশাসক বসিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা ভোগ করেন। পুলিশের বদলে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করে তাদের দিয়ে বেআইনি কাজ করান। এখন শিক্ষকদের পাকা চাকরি খেয়ে পিছনের দরজা দিয়ে অস্থায়ী নিয়োগের চেষ্টা করছেন, যাতে এই শিক্ষকরাও তাঁর দাস হয়ে।’
চাকরিচ্যূতদের বিকাশবাবুর পরামর্শ, ‘আপনারা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্কুলে যাবেন না। তাহলে আপনারাও আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত হবেন। বরং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকার যাতে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে, সেই বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছভাবে হয় সেদিকে নজর রাখুন।’