অস্বস্তি বেড়েছে কুণাল ঘোষের। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এর ফলে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সহ কয়েকজন বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছিল হাইকোর্টে। সেই মামলাতেই এবার নির্দেশ এসেছে। কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত ।
এদিন হাইকোর্ট নির্দেশ দেন যে কুণাল ঘোষ, রাজু দাসসহ পনেরো জনকে নোটিস পাঠাতে হবে। রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই নোটিসগুলির সঠিকভাবে পৌঁছনোর বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সুপার নিউমারারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ধীরগতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে, গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারের বাইরে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপার্থীদের একাংশ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
আইনজীবী বিকাশঞ্জন ভট্টাচার্য ও আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের তুমুল হেনস্থার অভিযোগ ওঠে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুধু আইনজীবীরাই নন, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকেও আপত্তিকর মন্তব্য ও স্লোগানের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অনুযায়ী, হাইকোর্ট চত্বরে বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য ছুঁড়ে দেন চাকরিপ্রার্থীরা। আর এই বিক্ষোভে উস্কানি দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সহ তৃণমূলের কিছু নেতা।
এরপর বিচারপতিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননার মামলার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের কিছু আইনজীবী। এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তিনজন বিচারপতির একটি বেঞ্চ গঠন করেন।
- আরও পড়ুন — দিলীপের ‘ছায়াসঙ্গী’ জিয়ারুল হক, কে এই ব্যক্তি? দিলীপের সাথে তৃণমূলের বড়সড় সিন্ডিকেটের ‘পর্দাফাঁস’?
বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় এবং বিচারপতি রাজর্ষী ভরদ্বাজের বেঞ্চে শুনানির সময় এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য অনুযায়ী, আদালতের অবমাননা একটি ফৌজদারি অপরাধ। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে রিপোর্ট প্রদান করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখযোগ্য যে, সেদিন বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে কুণাল একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি সিপিএম-এর সব নেতাদের ছবি প্রদর্শন করেন। কুণালের প্রশ্ন ছিল, একসময় যে বিকাশ ভট্টাচার্যরা মামলা লড়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন, এখন কেন তাঁরাই চাকরি কেড়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন? সময় কুণাল বলেন, “আর বিচারপতির কিছু কিছু সিপিএমের আইনজীবীকে দেখলে কী হয় জানি না। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখেছি। ভগবান-ভগবান-তারপর হল সাংসদ।” এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের হয়।এদিন বিচারপতি অরিজিত্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কি নোটিস প্রদান করা হয়েছে?” বিচারপতি জানান, প্রাথমিক ধারণা এটি একটি ক্রিমিনাল কন্টেম্পট। হলনামা চাওয়া হবে এবং সন্তুষ্ট না হলে রুল জারি করা হবে। আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করেন, “নোটিস বা শোকজ কেন? কেন তাদের জেলে পাঠানো হবে না অথবা জরিমানা করা হবে না?”
আইনজীবীর বক্তব্য, “তিনজনকে আমরা সনাক্ত করতে পারিনি। পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার সহায়তায় তাঁদের খুঁজে বের করুক। সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।” যেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয়েছিল, সেই বিকাশ রঞ্জন বলেন, “আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি হয়েছে। আদালত মনে করেছে এতে সম্মানহানি হয়েছে। এবার তারা জবাব দেবে।”