দলবদল করছেন কি দিলীপ ঘোষ! দিল্লিতে দাঁড়িয়ে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটালেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। বুধবার শিবপ্রকাশের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি বললেন, “যে পার্টি আমাকে দাঁড় করিয়েছে, সেই দল আমি কেন ছাড়ব?” তবে একইসঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাও করেন। বললেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্তত দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই।
দিলীপ ঘোষ যে অভিমানী, সেটা বোধহয় নতুন করে বলার কিছু নেই। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁকে দলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। দলের কোনও শীর্ষ নেতা এলে তাঁকে ডাকা হত না। সাংগঠনিক বৈঠকেও আমন্ত্রণ থাকত না। কোথাও গেলে স্থানীয় কর্মীদের সহযোগিতাও পেতেন না। এর মধ্যেই তাঁর দলবদলের গুজব ছড়ায়। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন। একুশের মঞ্চে থাকবেন কি না, তা স্পষ্টভাবে বলেননি। তবে দিলীপ ঘোষ হঠাৎ যেন বদলে গেলেন। দিল্লির ডাক পেয়ে তাঁর আচরণে পরিবর্তন এল। বুঝিয়ে দিলেন, দলবদলের কোনও প্রশ্ন নেই। এখন তিনি সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চান। অভিমান রয়ে গেলেও তিনি বিজেপির ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ সৈনিক। দিল্লিতে শিবপ্রকাশের সঙ্গে দেখা করার পর এমনটাই জানালেন দিলীপ। বোঝা গেল, অভিমানী দিলীপ দিল্লির অনুপ্রেরণায় কিছুটা চাঙ্গা হয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “অনেক কিছু আগেই ঘটেছে। পার্টির মিটিংয়ে আমাকে চেয়ার দেওয়া হত না। আমি তো কাজ করেছি, দল ছেড়ে যাইনি। একজন-দু’জন আমাকে দল ছাড়াতে চেয়েছিল, তারা চেষ্টা করেছিল। যে পার্টি দাঁড় করিয়েছে, সে কেন দল ছাড়বে?” তবে কারা তাকে দল থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করেছিল, সেই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। তবে ঘুরিয়ে শুভেন্দু-সুকান্ত জুটিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি দিলীপ। লোকসভায় তাকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দুর্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল না, সেটাও এদিন তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে, যা তৃণমূল যোগের জল্পনাও তৈরি করেছিল। এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “সবার প্রশংসা করি। কারও বিরুদ্ধে বিনা কারণে কিছু বলতে শুনেছেন? প্রশংসা করব না কেন? প্রশংসা করেছি কারণ যাঁরা তাঁকে নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছে, তাঁদের নামে কেস আছে। যাঁকে নিয়ে এত চর্চা, তাঁর নামে কেস নেই কেন? আর যার নামে কেস নেই, চোর ডাকাত বলে কেউ প্রমাণ করেনি, তাঁর সঙ্গে বসলে আমি খারাপ হয়ে গেলাম?” মমতার প্রশংসায় দলীয় কর্মীরা অস্বস্তিতে পড়েছিল কি না, এ প্রশ্নে দিলীপের উত্তর, “কর্মীরা নয়, কিছু লোক অস্বস্তিতে পড়েছিল। সমস্যা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এত গুরুত্ব দিয়েছেন কেন? এই জন্যই দলের অনেকে অস্বস্তিতে পড়েছিল।” তাঁর নিশানা যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।