একেবারে বাম দিকের ব্যক্তিটিকে শনাক্ত করুন। টাক মাথা এবং হাস্যোজ্বল মুখের এই ব্যক্তির নাম জিয়ারুল হক। তিনি মধ্যমগ্রামে বসবাস। তিনি দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এবং তৃণমূলের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের সমঝোতার বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগের মূল ব্যক্তিত্ব।
বিয়ে করেই কি ভোলবদল? মমতা নামের প্রতি যাঁর ‘অ্যালার্জি’, সেই দিলীপ ঘোষকেই (Dilip Ghosh) বুধবার রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে সস্ত্রীক দেখা গেল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক টেবিলে বসে খোশগল্প মগ্ন ছিলেন তিনি। রাজ্যের বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই সেখানে ছিলেন। এরপরেই বিজেপিতে (BJP) শুরু হয় তোলপাড়। আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিলীপবাবু সংবাদ শিরোনামে উঠে আসেন। তবে শুধু দিলীপ নন, একইসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছেন ‘হাইপ্রোফাইল’ দিলীপের ‘ছায়াসঙ্গী’ জিয়ারুল হক (Ziarul Haque)। কে এই ব্যক্তি? জানুন বিস্তারিত।

কে এই জিয়ারুল হক?
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দিলীপ ঘোষের ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে পরিচিত জিয়ারুল হক সম্পর্কে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য সামনে এসেছে। আইপিএল খেলা দেখা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংস্থায় দিলীপবাবুর সঙ্গে আঠার মতো লেগে রয়েছেন জিয়ারুল। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক ছবি। এমনকি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও দিলীপের পাশে জিয়ারুলের উপস্থিতি স্পষ্ট। প্রতিটি অনুষ্ঠানে দিলীপের সঙ্গী হিসেবে এই জিয়ারুল হককেই দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন? কে এই ব্যক্তি?
ইতিমধ্যেই জিয়ারুলকে ঘিরে এক বিষয় প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থায় দিলীপবাবুকে গিয়ে সেখানকার ডিরেক্টর এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন জিয়ারুল। অভিযোগ উঠেছে যে, জিয়ারুল একটি বড়সড় সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন এবং নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সেই সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, দিলীপ ঘোষের সঙ্গে জিয়ারুলের এত ঘনিষ্ঠতার কারণ কী? উত্তর এখনও অজানা।
একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, দিলীপ ঘোষকে কখনও এইমসের ডিরেক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন জিয়ারুল। অভিযোগ, তিনি পরে নিজে গিয়ে ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। কখনও তিনি আইসিয়ারের ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করছেন, কখনও শিয়ালদহ রেলের ডিআরএমের সঙ্গে আবার কখনও খড়গপুর ডিভিশনের ডিআরএমের সঙ্গে। এসব ছবিগুলি নিজেই শেয়ার করেছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, জিয়ারুল একটি বিশাল মাপের সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন।

দিলীপ ঘোষের সঙ্গে থাকা এই ব্যক্তি সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ডিরেক্টরদের মাধ্যমে টেন্ডারের কাজ করাচ্ছেন বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু দিলীপবাবুর এই বিষয়ে আগ্রহের কারণ কী? কোন স্বার্থে তিনি জিয়ারুল হককে সব জায়গায় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন? এসব বিষয় নিয়ে সামনে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে।

দলের অন্দর থেকেই শোনা যাচ্ছে, জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার বিষয়টিতে মধ্যস্থাকারীর ভূমিকায় রয়েছেন এই ব্যক্তিই। বুধবার দিলীপ এবং মমতার সঙ্গে একই ফ্রেমে দেখা গিয়েছে জিয়ারুলকে। ইডেন গার্ডেনে খেলা দেখতে যাওয়া থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই জিয়ারুলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শুধু কথার মাধ্যমেই নয়, ইতিমধ্যে প্রমাণ হিসেবে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। বিজেপির ভেতরেও শোনা যাচ্ছে যে, বর্তমানে বারাসাত জেলার সভাপতি রাজীব পোদ্দার, কামরুল, রাজীব খান, নবমিতা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী মানস দাসদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করছেন জিয়ারুল।
অভিযোগ উঠেছে, জিয়ারুল হক ডিরেক্টরদের পাশাপাশি উচ্চ পদে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে কাজ আদায় করছেন। তিনি কর্মী নিয়োগও করছেন। প্রশ্ন উঠছে, কাদের নিয়োগ করা হচ্ছে? কিসের ভিত্তিতে এই নিয়োগ? তার উদ্দেশ্য কী? দলের অন্দর থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠছে। দলের একটি অংশ ইতি মধ্যেই দিলীপকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এবার কি জিয়ারুল ‘তত্ত্ব’ সামনে আসায় দিলীপের জন্য আরও অস্বস্তি তৈরি হলো।
2 Comments
Pingback: কুণাল ঘোষ সহ তৃণমূলের ১৫ জনকে আদালত অবমাননা ও অসম্মানের জন্য রুল জারির আদেশ হাইকোর্টের। - প্রথম খ
Pingback: দিলীপকে ‘টোটাল বয়কট’? সঙ্ঘ ও বিজেপির সিদ্ধান্তে সুর বদল দিলীপ ঘোষের ! - প্রথম খবর