মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির দর্শনে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ। এ ঘটনা শুধু বিতর্কের জন্ম দেয়নি, বরং দলের একাংশের কঠোর সমালোচনা ও কটাক্ষের শিকার হয়েছেন দিলীপ। বিজেপি এবং বাংলার রাজনীতিতে ঠোঁটকাটাভাবের জন্য পরিচিত দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করতেও এখন অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী মুখ খোলায় দ্বিধা করছেন না। আবার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ যা বলছেন, তাতে ভোটের বছরে গেরুয়া শিবিরে কাদা ছোড়াছুড়ির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ দিলীপ ঘোষকে কোনওভাবেই সহানুভূতির চোখে দেখছে না। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা এবং আরএসএসের (RSS) যৌথ সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমারের মধ্যে শুক্রবার এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সঙ্ঘ ও বিজেপির সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা অরুণ কুমার সিদ্ধান্ত নিয় যে আপাতত দিলীপ ঘোষকে বিজেপির বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। আগামী ৬ তারিখেির রাজ্য স্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সেই বৈঠকে দিলীপ ঘোষকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে দিল্লির পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সুনীল বনশল। তবে বিজেপি এখনও এই সিদ্ধান্তটি সরাসরি বা আংশিকভাবে ঘোষণা করেনি।
- আরও পড়ুন — দিলীপের ‘ছায়াসঙ্গী’ জিয়ারুল হক, কে এই ব্যক্তি? দিলীপের সাথে তৃণমূলের বড়সড় সিন্ডিকেটের ‘পর্দাফাঁস’?
বিজেপির শীর্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের রাজ্য নেতাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে দিলীপ ঘোষকে কোনও কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। এছাড়া, দিলীপ ঘোষ কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করলে তাতে কোনও নেতাকে অংশগ্রহণ না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আরএসএসের স্বয়ংসেবক ছিলেন দিলীপ। দীর্ঘকাল তিনি সঙ্ঘের প্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে সঙ্ঘ থেকে তাঁকে রাজনৈতিক সংগঠনে এনে রাজ্য সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। দিলীপ ঘোষের এমন রং বদল , তা গেরুয়া শিবিরের (BJP) বহু সদস্যের কল্পনার বাইরে ছিল।
কিন্তু রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের প্রতি দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় আক্রমণ করতেন, তাতে তাঁকে আপোষহীন নেতা হিসেবে গণ্য করা হত। কিন্তু দিঘায় তাঁর গদ গদ ছবিটি পুরো দলকে আলোড়িত করেছে। রাজ্য স্তরে বিজেপির সাধারণ কর্মীরা যখন তৃণমূলের হাতে কোথাও নিগৃহীত হচ্ছেন, কোথাও মিথ্যালায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন, তখন দিলীপ ঘোষ কীভাবে এমন অকপট সৌজন্য প্রদর্শন করলেন, তা বিজেপির নেতা-কর্মীদের কাছে বোধগম্য নয়!
জানা গিয়েছে, দিলীপ ঘোষকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বাংলার নেতারাও উদ্বিগ্ন। বাংলায় আরএসএসের প্রান্ত প্রচারক জলধর মাহাতো এই বিষয়ে সঙ্ঘের মধ্যে এবং বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। আরও শোনা যাচ্ছে যে, আপাতত দল ও সঙ্ঘের পক্ষ থেকে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে তিনিও সম্মতি জানিয়েছেন।
ঘটনা এই যে, দিলীপের দিঘা সফর নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ যখন তীব্র হয়েছে, তখন দিলীপ ঘোষ নাম না করেও কিছু নোংরা সমালোচনা করেছেন দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে । তিনি বলেছেন, কেউ ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁচলের তলায় বসে রাজনীতি করেছেন’, আবার কারও সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ওর তো কত গার্লফ্রেন্ড। পাশাপাশি , উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮টি আসন জেতা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসনে জয়লাভ তাঁর নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ পুরো কৃতিত্ব দাবি করেছেন তিনি । এ কারণে দলের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
- আরও পড়ুন — কুণাল ঘোষ সহ তৃণমূলের ১৫ জনকে আদালত অবমাননা ও বিচারপতিকে অসম্মানের জন্য রুল জারির আদেশ হাইকোর্টের।
এদিকে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সুর পাল্টানো শুরু করেছে দিলীপ ঘোষ। আজ শনিবার সকালে ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণে এসে আবারও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। আরজি কর কাণ্ড থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালের অব্যবস্থার বিষয়টি তুলে ধরে দিলীপ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক নাটক করেন। আপনারাও সেগুলো প্রচার করেন। পরিবর্তন কি হয়েছে? ১৫ বছর তো পেরিয়ে গেল। উনি পরিবর্তন চান না, উনি শুধুমাত্র রাজনীতি করতে চান।”
রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি মমতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দিঘায় গিয়ে যে সৌজন্য দেখিয়েছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তা দেখাতে পারেননি। উনি যদি রাম মন্দির উদ্বোধনের সময় সেখানে গিয়ে সৌজন্য প্রকাশ করতেন, তাহলে ওনাকে এখানে মন্দির নির্মাণ করতে হতো না।”
বড়বাজারের হোটেলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে দিলীপ বলেন, “তিনি সব জায়গায় গিয়ে একটি করে মন্তব্য করে আসেন, কিন্তু কার্যত কিছুই করেন না।”