পদে বসার পরেই ভারত সফরে আসেন আমেরিকার ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স তুলসী গ্যাবার্ড। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি সরাসরি উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। তবে তিনি শুধু উগ্রপন্থা বা সন্ত্রাসবাদ নিয়েই থেমে থাকেননি। আরও একধাপ এগিয়ে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
ভারতে গোয়েন্দা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার সময় তুলসি গ্যাবার্ড যে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করবেন, তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছিল ঢাকা এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার একটি বড় অংশ। তবে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ভারতীয় মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার কী আলোচনা হয়েছে, তা জনসমক্ষে আসেনি।গোয়েন্দা বৈঠক শেষে শেখ হাসিনার সাথেও গোপন বৈঠকে অংশ নেন তুলসী। ভারতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে মুখ খুলেছেন তুলসি গ্যাবার্ড। এই প্রেক্ষিতে আজ রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তুলসি বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর দীর্ঘকাল ধরে চলা দুর্ভাগ্যজনক নির্যাতন, হত্যা এবং অত্যাচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন।’

উল্লেখ্য, তুলসি গ্যাবার্ড নিজে হিন্দু। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় তিনি সহানুভূতিশীল। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সর্বত্রই হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের বিষয়ে বরাবরই সরব থেকেছেন তুলসি। তিনি নিজে মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। পরে ডেমোক্র্যাটদের ত্যাগ করে তিনি ট্রাম্পের প্রশংসা করেন ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে।
প্রসঙ্গত, বিগত দিনে বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়েছে মৌলবাদ। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে বিএনপি-জামাত দেখেছিল ‘আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র’। তবে কয়েক মাস পরও সেই দেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার থামেনি। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয় সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘির আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছিল। ‘জুলাই বিপ্লবের’ ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছিল। বাংলাদেশি মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
নয়া দিল্লিতে অজিত ডোভালের সাথে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা প্রধান ও শীর্ষকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে । নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য এই আয়োজন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। রবিবার এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। তাঁর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, নিউজিল্যান্ডের গোয়েন্দা প্রধানসহ ২০ দেশের গোয়েন্দা শীর্ষকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বড় বার্তা দিয়েছেন তুলসী।