এ যেনো শুরু হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে এতে নেই কোনো গোলাবারুদ,রয়েছে বাণিজ্যের বিশ্বযুদ্ধ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন। এর পাল্টা কানাডা ,চীন উল্টে তাদের বাজারে আমেরিকার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে চলেছে।
কানাডা, মেক্সিকো এবং চীন,এই তিন দেশেরই আমেরিকায় বড় বাণিজ্যিক বাজার রয়েছে। হোয়াইট হাউসের মতে, এই শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকার বাজারে বিভিন্নণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। সংবাদ মাধ্যম ‘সিএনএন’ জানিয়েছে , ফল, সবজি,মাংস , গ্যাস, গাড়ি, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, খেলনা, জামাকাপড়, কাঠ এবং বিয়ার আরও দামী হতে পারে আমেরিকায়।
আমেরিকা সবচেয়ে বেশি ফল ও সবজি আমদানি করে মেক্সিকো থেকে।কানাডা থেকে বিভিন্ন শস্য, গবাদি পশু, মাংস এবং খামার সংক্রান্ত অন্যান্য পণ্য সবচেয়ে বেশি আসে। দুই দেশ আমদানিকৃত পণ্যের উপর আমেরিকা শুল্ক আরোপ করলে, এদের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প । আগামী মঙ্গলবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে।তেল এবং গ্যাসের দামেও প্রভাব পড়তে পারে। গত বছরে কানাডা থেকে ৯৭০০ কোটি ডলারের তেল এবং গ্যাস আমদানি করে আমেরিকা। ট্রাম্পের ঘোষণায় ১০ শতাংশ শুল্কের কথা বলা হলেও, এর প্রভাব আমেরিকার বাজারে দেখা যেতে পারে। আমেরিকার বিভিন্ন গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের বাজারে একটি বড় অংশ আমদানি হয় মেক্সিকো থেকে। কম খরচে শ্রমিক পাওয়ার কারণে বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা তাদের কারখানাগুলি মেক্সিকোয় স্থানান্তর করেছে। গত বছরে মেক্সিকো থেকে ৮৭০০ কোটি ডলারের গাড়ি এবং ৬৪০০ কোটি ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে আমেরিকা। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার বাজারে গাড়ির দামের উপরেও প্রভাব পড়তে পারে!
কানাডা ও মেক্সিকো উভয় দেশ থেকেই স্টিলের সামগ্রী আমেরিকায় রফতানি হয়। আমেরিকায় স্টিলের পণ্য রফতানিতে কানাডা শীর্ষস্থানে রয়েছে, এবং মেক্সিকো তৃতীয় স্থানে। আমেরিকা বর্তমানে যে পরিমাণ স্টিলের পণ্য আমদানি করে, তার এক চতুর্থাংশই কানাডা থেকে আসে। মেক্সিকো থেকেও প্রায় ১২ শতাংশ স্টিলের পণ্য আমদানি করা হয়। পাশাপাশি মেক্সিকো থেকে প্রচুর পরিমাণ বিয়ার এবং অন্যান্য মদও আমদানি হয় আমেরিকায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মেক্সিকো থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিয়ার এবং ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি অন্যান্য মদ আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করেছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে এসব পণ্যের দাম আমেরিকায় বৃদ্ধি পেতে পারে ।
শিশুদের খেলনার আন্তর্জাতিক বাজারের সিংহভাগই চিনের দখলে। চিন থেকে আমেরিকা প্রায় ৭৫ শতাংশ খেলনা এবং অন্যান্য ক্রীড়াসামগ্রী আমদানি করে। চিনে তৈরি জুতো এবং বৈদুত্যিক সামগ্রীও আমেরিকার বাজার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকারে প্রায় ৯৯ শতাংশ জুতোই আমদানি করা হয়। তার মধ্যে ৬ শতাংশ চিনা পণ্য। আমেরিকার বাজারে চিনে তৈরি মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ, গেমও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। চিনা পণ্যের উপর আমিকা শুল্ক আরোপ করার কারণে খেলনা, জুতো এবং বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দামেও প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম দুই শক্তিধর রাষ্ট্র হল আমেরিকা এবং চীন। এই দুই দেশকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র বৈদেশিক বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। এই বাণিজ্য সংঘাত বিশ্বের অন্য প্রান্তেও প্রভাব ফেলতে পারে। চীনা পণ্যের উপর ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আমেরিকার এই শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের পরিপন্থী।এদিকে আমেরিকান পণ্যের উপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে কানাডা। কানাডা শুধু আমেরিকান পণ্যের উপর পাল্টা শুল্কই আরোপ করেনি , সেই দেশের পণ্যকে এক প্রকার বর্জন করারও আহ্বান জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “আমেরিকান পণ্য কম কিনুন। আমেরিকার বদলে কানাডার পণ্য এবং পরিষেবাগুলি ব্যবহার করুন।” আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “কানাডার উপর শুল্ক আরোপ করায় আপনাদের চাকরি নিয়েও সংকট দেখা দিতে পারে।”
1 Comment
Pingback: ভারতের দাপুটে পারফরম্যান্সে শেষ ম্যাচেও বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড ! ছন্দে ফিরলেন সামি ! - প্রথম খবর